নিকটে অল্প কিছু শিক্ষা লাভ করিয়াছিলেন, কিছু ইংরেজি, কিছু সংস্কৃত ব্যাকরণ ও ঋজুপাঠ, কিছু জ্যোতির্বিজ্ঞান। কিন্তু বাংলা পড়ায় তাঁহার বিরাম ছিল না। এই সময়ে তাঁহার কোনো অধ্যাপক তাঁহার অন্যান্য বিষয়ে পড়াশুনা সম্বন্ধে হতাশ হইয়া অবশেষে কালিদাসের কুমারসম্ভব ও শেক্সপীয়রের ম্যাকবেথ প্রভৃতি তাঁহাকে তর্জমা করিয়া শুনাইতেন। বাড়িতেও সাহিত্যচর্চার অভাব ছিল না। অক্ষয়চন্দ্র চৌধুরী মহাশয় ছিলেন ইংরেজি কাব্যসাহিত্যে ভরপুর।তাঁহার মুখে আবৃত্তি ও ব্যাখ্যা শুনিয়া রবীন্দ্রনাথের কল্পনাপ্রবণ চিত্ত বিস্তর খোরাক সংগ্রহ করিত।বিহারীলাল চক্রবর্তী মহাশয়ের সঙ্গেও ইঁহাদের বাড়ির বিশেষ একটি প্রীতির সম্বন্ধ ছিল। সুতরাং বালক-বয়স হইতে সাহিত্যচর্চার আবহাওয়ার মধ্যে তিনি মানুষ হইয়াছিলেন।
যেমন সাহিত্যচর্চা তেমনি গীতচর্চা। বাল্যকাল হইতে ক্রমাগত গান শুনিয়া ও তৈরি করিয়া সুরের অনির্বচনীয়তার রাজ্যে তাঁহার মন ঘুরিয়া বেড়াইবার সুযোগ লাভ করিয়াছিল।
কবি অল্পবয়স হইতেই অনেক রচনা করিয়াছেন, সে-সকলের উল্লেখ আমরা করিব না। তাঁহার ষোলো বৎসর বয়সের সময় তাঁহাদের বাড়ি হইতে ‘ভারতী’ কাগজখানি প্রথম বাহির হয়, তাহাতে কবির অনেক বাল্যরচনা প্রকাশিত হইয়াছিল।
‘ভারতী’ দ্বিতীয় বৎসরে পদার্পণ করিলে রবীন্দ্রনাথ সতেরো বৎসর বয়সে বিলাত যাত্রা করেন। তাহার পূর্বে আমেদাবাদে তাঁহার মধ্যমভ্রাতা সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশয়ের সঙ্গে কিছুকাল বাস করেন। শাহীবাগের বাদশাহী আমলের প্রকাণ্ড এক প্রাসাদে ছিল তাঁহাদের বাসা— প্রাসাদের পাদমূলে সাবরমতী (সুবর্ণমতী) নদীর ক্ষীণ স্রোত প্রবাহিত— প্রকাণ্ড ছাদ, বিচিত্র কক্ষ এবং তাহাদের প্রবেশের বিচিত্র
২৭