করিয়া তাহার কারাগার হইতে বাহির হইয়া পড়িবার জন্য বারম্বার একটি ক্রন্দন আছে:
কুসুমের কারাগারে রুদ্ধ এ বাতাস,
ছেড়ে দাও ছেড়ে দাও বদ্ধ এ পরান।
সেইজন্য স্পষ্টই বুঝা যায় যে কবির সৌন্দর্যসাধনায় ভোগ কখনোই একান্ত হইয়া উঠিতে পারে নাই।
সৌন্দর্যের বেলা যেমন দেখা গেল, প্রেমের বেলাতেও ঠিক তাই। ‘মানসী’র প্রেমের কবিতাগুলিতে যদিচ প্রেমের জীবনের খুব গভীরতার পরিচয় আছে, যে প্রেম আপনার ‘জীবনমরণময় সুগম্ভীর কথা’ বলিবার জন্য ব্যাকুল, যে প্রেমের ধ্যাননেত্রে ‘যতদূর হেরি দিক্দিগন্ত তুমি আমি একাকার’, যে প্রেম আপনাকে জন্মজন্মান্তরে অনন্ত বলিয়া জানে— তথাপি সে প্রেম যে জীবনের সব নয়, তাহাকে যে চরম করিয়া তোলা চলে না, এমন একটা ভাব মানসীর অধিকাংশ কবিতার মধ্যে বারম্বার প্রকাশ পাইয়াছে।
“নিষ্ফল কামনা”র কথা পূর্বেই উল্লেখ করিয়াছি। “নিষ্ফল প্রয়াসে”র মধ্যেও সেই একই কথা। “আঁখির অপরাধ” (সুরদাসের প্রার্থনা) কবিতাটিতে প্রেম যে সমস্ত হরণ করিয়া একটি মূর্তির মধ্যেই বাঁধা পড়িয়া গেছে সেই মূর্তির বন্ধন হইতে মুক্তিলাভের জন্য ব্যাকুলতা প্রকাশ পাইয়াছে:
ভুবন হইতে বাহিরিয়া আসে ভুবনমোহিনী মায়া,
যৌবনভরা বাহুপাশে তার বেষ্টন করে কায়া।
এই ‘মায়ার খেলা’ হইতে মুক্তির আকাঙ্ক্ষা কি তীব্র:
যাক, তাই যাক। পারি নে ভাসিতে কেবলি মুরতি-স্রোতে।
লহো মোরে তুলে আলোকমগন মুরতিভুবন হতে।
৪০