বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:রবীন্দ্রনাথ - অজিতকুমার চক্রবর্তী (১৯৬০).pdf/৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আঁখি গেলে মোর সীমা চলে যাবে— একাকী অসীম-ভরা
আমারি আঁধারে মিলাবে গগন, মিলাবে সকল ধরা।

 একবার এই আঁখির জগৎ মুছিয়া গেলে তার পর আবার সমস্ত সৌন্দর্য তাহার নবীন নির্মলতায় যখন প্রকাশ পাইবে তখনই এই বেদনা মুছিয়া যাইবে, এই আশ্বাসের কথা “আঁখির অপরাধ” কবিতাটির শেষে আছে।

 তবেই দেখা যাইতেছে যে, সৌন্দর্য ও প্রেম যেখানেই সমগ্রকে আচ্ছন্ন করিয়া বাসনার সংকীর্ণতার মধ্যে ঘুরাইয়া মারিয়াছে, সেখানেই কবির চিত্তে বেদনা জাগিয়া সেই বাসনাপাশ ছিন্ন করিবার জন্য লড়াই করিয়াছে। সেই “ভৈরবী গানে”র

ওই মন-উদাসীন,  ওই আশাহীন
ওই ভাষাহীন কাকলি
দেয় ব্যাকুল পরশে সকল জীবন
বিকলি।

 সমস্ত মানসীর মধ্যে থাকিয়া থাকিয়া সেই ভৈরবীর বৈরাগ্যের বিকল-করা সুর শুনিতে পাওয়া যায়, ইহা আমার বিশ্বাস।

 ‘মানসী’র মধ্যে যে-সকল ব্যঙ্গ কবিতা স্থান পাইয়াছে, যথা “বঙ্গবীর”, “দেশের উন্নতি”, “ধর্মপ্রচার” প্রভৃতি, তাহাদের মধ্যেও একটি বেদনা আছে। আমাদের দেশের চারি দিকের ক্ষুদ্র কথা, ক্ষুদ্র চিন্তা, ক্ষুদ্র পরিবেষ্টন, ক্ষুদ্র কাজকর্ম কবিকে তখন বড়ই আঘাত দিতেছিল। নিজেরও কেবলই অনুভূতিময় জীবনের মধ্যে আবিষ্ট হইয়া থাকিবার জন্য একটা আপনার সঙ্গে আপনার সংগ্রাম চলিতেছিল— খুব একটা বড় ক্ষেত্রে আপনার সুখদুঃখের বিরাট প্রকাশ দেখিবার জন্য চিত্ত ব্যাকুল হইয়া উঠিয়াছিল— ‘দুরন্ত আশা’ কবিতাটি হইতে তাহা বেশ

৪১