বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:রবীন্দ্রনাথ - অজিতকুমার চক্রবর্তী (১৯৬০).pdf/৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বলেছি যে, কাল বৃষ্টি হয়ে গেছে, আজ বর্ষণ-অন্তে চঞ্চল মেঘ এবং চঞ্চল রৌদ্রের পরস্পর শিকার চলছে—’

 তবেই দেখা যাইতেছে, প্রকৃতির একটি সুন্দর ছায়ারৌদ্রমণ্ডিত শ্যামল বেষ্টনের মধ্যে মানুষের জীবনের সমস্ত সুখদুঃখকে গাঁথিবার আবেগ গল্পগুলির আসল উৎপত্তির উৎসস্বরূপ। ‘সোনার তরী’র কবিতাগুলির মধ্যেও বাহিরের সঙ্গে অন্তরের, মানুষের সঙ্গে বিশ্বপ্রকৃতির সম্পূর্ণ মিলনের ভাবটি জাগ্রত। বিচ্ছিন্ন কোনো ভাবের মধ্যে, আপনার মনগড়া কল্পনার মধ্যে জীবনকে খণ্ডিত করিবার মিথ্যাকে এবং ব্যর্থতাকে সোনার তরীর প্রায় সকল কবিতায় প্রদর্শন করা হইয়াছে। প্রথম কবিতা “সোনার তরী”র ভিতরের কথাটিই তাই। সৌন্দর্যের যে সম্পদ জীবনের নানা শুভ মুহূর্তে একটি চিরপরিচিত অথচ অজানা সত্তার স্পর্শের ভিতর দিয়া ক্রমাগতই জীবনের ভিতরে সঞ্চিত হইয়াছে, তাহাকে নিজের ভোগের গণ্ডি দিয়া রাখিতে গেলেই সে পলায়ন করে— সে যে বিশ্বের, সে যে সকলের। “পরশপাথর”এও সেই একই কথা। পরশপাথরই নানা সৌন্দর্যের ভিতর দিয়া জীবনকে গভীরভাবে স্পর্শ করিতেছে— সেই বাস্তব সত্য ছাড়িয়া কল্পনায় তাহার অন্বেষণ করিতে গেলে কোনোদিনই তাহাকে খুঁজিয়া পাওয়া যাইবে না। “বৈষ্ণব-কবিতা”র মধ্যেও সেই একই ভাব। বাস্তব প্রেমের মধ্যেই দেবত্ব নিহিত— প্রেমকে বাস্তব ক্ষেত্র হইতে সরাইয়া অপ্রকৃতের মধ্যে স্থাপন করা যায় না। “দুই পাখি”, “আকাশের চাঁদ”, “দেউল” প্রভৃতি সকল কবিতার ভিতরেই আপনার কল্পনার দিক হইতে বিশ্বের দিকে পরিপূর্ণ অনুভূতি লইয়া প্রবেশ করিবার সাধনার সংবাদ সোনার তরী কাব্যখানির আদ্যন্ত-মধ্যে পাওয়া যায়। “পুরস্কার” কবিতাটিতে—

৪৬