বাংলা গ্রাম্য জীবনের যে-সকল ছবি যে-সকল ঘটনা চোখে পড়িতেছিল বা কানে আসিতেছিল তাহাকে গল্পের সূত্রে ধরিয়া প্রকৃতির ভাবের দ্বারা গাঁথিয়া তুলিয়া প্রকাশ করাই গল্প লিখিবার ভিতরের কারণ। দৃষ্টান্তস্বরূপে ধরা যাক “অতিথি” গল্পটা। সেটা একটি যাত্রার দলের ছেলের গল্প—সে কোথাও স্থায়ীভাবে বাঁধা পড়িতে চাহিত না। সে পর্যায়ক্রমে নানা দলে ভিড়িয়াছিল; তাহার ঔৎসুক্য সকল বিষয়ে সজীব ছিল বলিয়া সে সর্বত্রই অবাধে মিশিয়া যাইতে পারিত। কিন্তু সে বন্ধন মানিত না। অবশেষে জমিদার মতিবাবুর আশ্রয়ে দীর্ঘকাল থাকিয়া লেখাপড়া শিখিয়া যখন তাহার মন বসিয়াছে মনে হইল, তখন তাঁহার কন্যার সহিত বিবাহের রাত্রে অকারণে সে হঠাৎ পলায়ন করিল। গল্পটা কিছুই নহে, বিশ্বপ্রকৃতির চিরচঞ্চল অথচ চিরনির্লিপ্ত একটি ভাবকে ঐ একটু গল্পের সূত্রের মধ্যে ধরিবার এক রকমের চেষ্টা।
শিলাইদহের একটা চিঠির খানিকটা অংশ এখানে তুলিয়া দিলাম—
‘আজকাল মনে হচ্ছে, যদি আমি আর কিছুই না ক’রে ছোটো ছোটো গল্প লিখতে বসি তা হলে কতকটা মনের সুখে থাকি এবং কৃতকার্য হতে পারলে হয়তো পাঁচজন পাঠকেরও মনের দুখের কারণ হওয়া যায়। গল্প লেখবার একটা সুখ এই, যাদের কথা লিখব তারা আমার দিনরাত্রির সমস্ত অবসর একেবারে ভরে রেখে দেবে, আমার একলা মনের সঙ্গী হবে, বর্ষার সময় আমার বদ্ধ ঘরের সংকীর্ণতা দূর করবে, এবং রৌদ্রের সময়ে পদ্মাতীরের উজ্জ্বল দৃশ্যের মধ্যে আমার চোখের ’পরে বেড়িয়ে বেড়াবে। আজ সকালবেলায় তাই গিরিবালা— নাম্নী উজ্জ্বলশ্যামবর্ণ একটি ছোটো অভিমানী মেয়েকে আমার কল্পনারাজ্যে অবতারণ করা গেছে। সবেমাত্র পাঁচটি লাইন লিখেছি এবং সে পাঁচ লাইনে কেবল এই কথা
৪৫