এটা কেবলমাত্র একটা তত্ত্বকথা— তাহার কারণ সকলকে বাদ দেওয়া যে অদ্বৈত, সেও একটা নাম মাত্র, তাহার সঙ্গে সমস্ত জীবনের কোনো যোগ হওয়া কোনোমতেই সম্ভাবনীয় নহে। আমি যাহা ভাবি তাহা ভুল, আমি যাহা দেখি তাহা ভুল, সমস্তই যদি ভুল হয় তবে অদ্বৈত এ কথাটা বল আর নাই বল তাহাতে কিছুই আসে যায় না। যে তত্ত্ব এখন সমস্ত দার্শনিকসমাজ মানিয়া লইতেছে তাহা এই যে— অদ্বৈত সকলকে বাদ দিয়া নাই, সকল বৈচিত্র্যকে লইয়া সকল বৈচিত্র্যের অন্তরতম হইয়া আছে। আমাদের জানা ক্রমেই বড় ও ব্যাপক হইতেছে, সে সমস্ত বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের মধ্যে এক নিয়মকে অনুসন্ধান করিয়া ফিরিতেছে। অদ্বৈতের এইখানেই প্রকাশ। আমাদের অনুভূতি সাহিত্য শিল্পে ক্রমশই বিশ্ববোধে পূর্ণ হইয়া উঠিতেছে— অদ্বৈতের সঙ্গে তাহার এই তো যোগ। আমাদের সমস্ত চেষ্টা চিন্তা কল্পনা ক্রমাগত খণ্ডতাকে পরিহার করিয়া ভূমার সঙ্গে আপনার যোগকে অনুভব করিবার জন্য কত কী করিয়া মরিতেছে— জগৎ জুড়িয়া আমরা তাহার নিদর্শন দেখিতেছি। সুতরাং আমরা যদিও অদ্বৈত নহি, অদ্বৈত হইতে ভিন্ন, তথাপি অদ্বৈত আমাদেরই ভিতর দিয়া প্রকাশ পাইতেছেন— ভিন্ন হইয়াও তাই আমরা অদ্বৈতের সঙ্গে এক এবং অভিন্ন। এই ভেদাভেদ তত্ত্বটি সর্বত্র এখন প্রাধান্য লাভ করিতেছে।
বস্তুত আমাদের চেতনার প্রবাহ জাগরণ-সুষুপ্তির জোয়ার-ভাঁটার মধ্য দিয়া আমাদিগকে গানের মতো একবার অহংবোধের খণ্ড চেতনার বিচিত্র তানের মধ্যে ছাড়িয়া দিতেছে এবং আর-একবার সমস্ত বিচিত্রতার সমাপ্তি বিশ্বচৈতন্যের অখণ্ড সমের মধ্যে বিলীন করিতেছে— এই ভেদাভেদের ছন্দেই মুহূর্তে বিশ্বসংগীত রচিত হইয়া উঠিতেছে। সাধনার দ্বারা আমরা একই কালে এই বিচিত্রকে এবং এককে, তানকে এবং
৫২