পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অচলিত) দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/১১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

పిe রবীন্দ্র-রচনাবলী স্বরে স্বশৃঙ্খল তাল নাই, সঙ্গীতে তাল আছে। সঙ্গীত ও কবিতা উভয়ে ভাব প্রকাশের কুইটি অঙ্গ ভাগাভাগি করিয়া লইয়াছে। তবে, কবিতা ভাব প্রকাশ সম্বন্ধে যতখানি উন্নতি লাভ করিয়াছে, সঙ্গীত ততখানি করে নাই । তাহার একটি প্রধান কারণ আছে। শূন্তগর্ত কথার কোন আকর্ষণ নাই, না তাহার অর্থ আছে, না তাহা কানে তেমন মিঠা লাগে। কিন্তু ভাবশূন্ত স্বরের একটা আকর্ষণ আছে, তাহা কানে মিষ্ট শুনায়। এই জন্য ভাবের অভাব হইলেও একটা ইন্দ্রিয়-সুখ তাহা হইতে পাওয়া যায়। এই নিমিত্ত সঙ্গীতে ভাবের প্রতি তেমন মনোযোগ দেওয়া হয় নাই । উত্তরোত্তর আস্কারা পাইয়া সুর বিদ্রোহী হইয়া ভাবের উপর আধিপত্য বিস্তার করিয়াছে। এক কালে যে দাস ছিল, আর এক কালে সেই প্রভু হইয়াছে । চক্রবৎ পরিবর্তন্তে দুঃখানিচ স্থখানিচ–কিন্তু এ চক্র কি আর ফিরিবে না ? যেমন ভারতবর্ষের ভূমি উর্বর হওয়াতেই ভারতবর্ষের অনেক দুর্দশা, তেমনি সঙ্গীতের ভূমি উর্বর হওয়াতেই সঙ্গীতের এমন দুর্দশা । মিষ্ট স্বর শুনিবামাত্রই ভাল লাগে, সেই নিমিত্ত সঙ্গীতকে আর পরিশ্রম করিয়া ভাব কর্ষণ করিতে হয় নাই—কিন্তু শুদ্ধ মাত্র কথার যথেষ্ট মিষ্টত নাই বলিয়া কবিতাকে প্রাণের দায়ে ভাবের চর্চা করিতে হইয়াছে, সেই নিমিত্তই কবিতার এমন উন্নতি ও সঙ্গীতের এমন অবনতি । অতএব দেখা যাইতেছে, যে, কবিতা ও সঙ্গীতে আর কোন তফাৎ নাই, কেবল ইহা ভাব প্রকাশের একটা উপায়, উহা ভাব প্রকাশের আর একটা উপায় মাত্র। কেবল অবস্থার তারতম্যে কবিতা উচ্চ-শ্রেণীতে উঠিয়াছে ও সঙ্গীত নিম্ন-শ্রেণীতে পড়িয়া রহিয়াছে ; কবিতায় বায়ুর ন্যায় স্বক্ষ ও প্রস্তরের ন্যায় স্থল সমুদয় ভাবই প্রকাশ করা যায়, কিন্তু সঙ্গীতে এখনো তাহ করা যায় না। কবি Matthew Arnold *ford “Epilogue to Lessing's Laocoon” at No of Veto fs, os s কবিতার যে প্রভেদ স্থির করিয়াছেন, সংক্ষেপে তাহার মৰ্ম্ম নিজ ভাষায় নিম্নে প্রকাশ করিলাম। তিনি বলেন–চিত্রে প্রকৃতির এক মুহূর্তের বাহ অবস্থা প্রকাশ করা যায় মাত্র । যে মুহূর্বে একটি সুন্দর মুখে হাসি দেখা দিয়াছে, সেই মুহূৰ্ত্তটি মাত্র চিত্রে প্রকাশিত হইয়াছে, তাহার পর-মুহূৰ্ত্তটি আর তাহাতে নাই। ষে মুহূর্তটি তাহার শিল্পের পক্ষে সৰ্ব্বাপেক্ষ শুভ মুহূৰ্ত্ত, সেই মুহূৰ্ত্তটি অবিলম্বে বাছিয়া লওয়া প্রকৃত চিত্রকরের কাজ। তেমনি মনের একটি মাত্র স্থায়ী ভাব বাছিয়া লওয়া, ভাব-শৃঙ্খলের একটি মাত্র অংশের উপর অবস্থান করিয়া থাকা সঙ্গীতের কাজ । মনে কর, আমি বলিলাম, “হায়!” কথাটা ঐখানেই ফুরাইল, কথায় উহার অপেক্ষ আর অধিক প্রকাশ করিতে পারে না। আমার হৃদয়ের একটি অবস্থাবিশেষ ঐ একটি মাত্র ক্ষুদ্র