পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অচলিত) দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

No রবীন্দ্র-রচনাবলী তাহাকে কি বলিব খুজিয়া পাইতেছি না। তাহা অসীমায়তনতা, বা আয়তনের অসীম অভাব । একটি বালুকণাকে আমরা যদি জড়ভাবে দেখিতে পাই, তাহা কতকগুলি পরমাণুর সমষ্টি। কিন্তু বাস্তবিকই কি তাই ! তাহাকে কতকগুলি পরমাণুর সমষ্টি বলিলেই কি তাহার সমস্ত নিঃশেষে বলা হইল, তাহার আর কিছুই বাকী রহিল না ! তাহা কি অনন্ত জ্ঞানের সমষ্টি নহে, অনন্ত ইতিহাস অর্থাৎ অনন্ত সময়ের সমষ্টি নহে ! তাহার মধ্যে যতই প্রবেশ কর ততই প্রবেশ করা যায় না কি ! তাহার বিষয় জানিয়া শেষ করিবার যে নাই—যতই জান ততই আরো জানার আবশ্যক হয়—জানিয়া জানিয়া অবশেষে যখন শ্রান্ত হইয়া সমুদয় জ্ঞানশৃঙ্খলকে অতি বৃহৎ স্তুপাকৃতি করিয়া তুলা গেল তখনও দেখা গেল বালির শেষ হইল না। অতএব নিতান্ত জড়ভাবে না দেখিয়া মানসিক ভাবে দেখিলে বালুকণার আকার আয়তন কোথায় অদৃশ্য হইয়া যায়, জানা যায় যে তাহা অসীম । আমরা যাহাকে সচরাচর ক্ষুদ্রতা বা বৃহত্ত্ব বলি, তাহা কোন কাজের কথা নহে। আমাদের চক্ষু যদি অণুবীক্ষণের মত হইত তাহা হইলেই এখন যাহাকে ক্ষুদ্র দেখিতেছি, তখন তাহাকেই অতিশয় বৃহৎ দেখিতাম। এই অণুবীক্ষণতা-শক্তি কল্পনায় যতই বাড়াইতে ইচ্ছা কর ততই বাড়িতে পারে। অত গোলে কাজ কি, পরমাণুর বিভাজ্যতার ত আর কোথাও শেষ নাই ; অতএব একটি বালুকণার মধ্যে অনন্ত পরমাণু আছে, একটি পৰ্ব্বতের মধ্যেও অনন্ত পরমাণু আছে, ছোট বড় আর কোথায় রহিল ! একটি পৰ্ব্বতও যা, পৰ্ব্বতের প্রত্যেক ক্ষুদ্রতম অংশও তাই ; কেহই ছোট নহে, কেহই বড় নহে, কেহই অংশ নহে সকলেই সমান। বালুকণা কেবল যে জ্ঞেয়তায় অসীম, দেশে অসীম তাহা নহে, তাহা কালেও অসীম, তাহারই মধ্যে তাহার অনন্ত ভূত ভবিষ্যৎ বৰ্ত্তমান একত্রে বিরাজ করিতেছে । তাহাকে বিস্তার করিলে দেশেও তাহার শেষ পাওয়া যায় না, তাহাকে বিস্তার করিলে কালেও তাহার শেষ পাওয়া যায় না। অতএব একটি বালুকা অসীম দেশ অসীম কাল অসীম শক্তি সুতরাং অসীম জ্ঞেয়তার সংহত কণিকা মাত্র। চোখে ছোট দেখিতেছি বলিয়া একটা জিনিষ সীমাবদ্ধ নাও হইতে পারে। হয়ত ছোট বড়র উপর অসীমত কিছু মাত্র নির্ভর করে না । হয়ত ছোটও যেমন অসীম হইতে পারে বড়ও তেমনি অসীম হইতে পারে। হয়ত অসীমকে ছোটই বল আর বড়ই বল সে কিছুই গায়ে পাতিয়া লয় না । , “যাহা কিছু, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনস্ত সকলি, বালুকার কণা, সেও অসীম অপার,