পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অচলিত) দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আলোচনা | २१ পণ্ডিতেরা বলেন, যে সুন্দর তাহার মধ্যে বিষম কিছুই নাই ;—তাহার আপনার মধ্যে আপনার পরিপূর্ণ সামঞ্জস্য ; তাহার কোন-একটি অংশ অপর-একটি অংশের সহিত বিবাদ করে না ; জেদ করিয়া অন্য সকলকে ছাড়াইয় উঠে না ; ঈর্ষাবশতঃ স্বতন্ত্র হইয়া মুখ বাকাইয়া থাকে না । তাহার প্রত্যেক অংশ সমগ্রের মুখে সুখী ; তাহারা ভাবে আমরা যে আপনার স্বন্দর সে কেবল সমগ্রকে স্বন্দর করিয়া তুলিবার জন্য । তাহারা যদি স্বস্বপ্রধান হইত, তাহারা যদি সকলেই মনে করিত আর সকলের চেয়ে আমিই মস্ত লোক হইয়া উঠিব, এক জন আর এক জনকে না মানিত, তাহা হইলে, না তাহারা নিজে সুন্দর হইত, না তাহাদের সমগ্রট সুন্দর হইয়া উঠিত। তাহ হইলে একটা বাকাচোরা হ্রস্ব দীর্ঘ উচু নীচু বিশৃঙ্খল চক্ষুশূল জন্মগ্রহণ করিত। অতএব দেখা যাইতেছে, যথার্থ যে সুন্দর সে প্রেমের আদর্শ। সে প্রেমের প্রভাবেই সুন্দর হইয়াছে ; তাহার আদ্যস্তমধ্য প্রেমের সূত্রে গাথা ; তাহার কোন খানে বিরোধ বিদ্বেষ নাই। প্রেমের শতদল একটি বৃস্তের উপরে কি মধুর প্রেমে মিলিয়া থাকে ! তাই তাহাকে দেখিতে ভাল লাগে । তাহার কোমলতা মধুর, কারণ কোমলতা প্রেম, কোমলত কাহাকেও আঘাত করে না, কোমলতা সকলের গায়ে করুণ হস্তক্ষেপ করে, সে চোখের পাতায় স্নেহ আকর্ষণ করিয়া আনে। ইন্দ্রধতুর রংগুলি প্রেমের রং, তাহাদের মধ্যে কেমন মিল ! তাহারা সকলেই সকলের জন্য জায়গা রাখিয়াছে, কেহ কাহাকেও দূর করিতে চায় না, তাহারা স্বরবালিকাদের মত হাত-ধরাধরি করিয়া দেখা দেয়, গলাগলি করিয়া মিলাইয়া যায় । গানের সুরগুলি প্রেমের সুর, তাহার সকলে মিলিয়া থেলাইতে থাকে, তাহারা পরস্পরকে সাজাইয়া দেয়, তাহারা আপনার সঙ্গিনীদের দূর হইতে ডাকিয়া আনে ! এই জন্যই সৌন্দৰ্য্য মনের মধ্যে প্রেম জন্মাইয় দেয়, সে আপনার প্রেমে অন্তকে প্রেমিক করিয়া তুলে, সে আপনি সুন্দর হইয়া অন্তকে সুন্দর করে । সৌন্দর্ঘ্য বিশ্বপ্রেমী। যে স্বন্দর, কেবল যে তাহার নিজের মধ্যে সামঞ্জস্য আছে তাহা নয় ;–সৌন্দর্ঘ্যের সামঞ্জস্য সমস্ত জগতের সঙ্গে । সৌন্দর্ঘ্য জগতের অনুকূল কদৰ্য্যতা সয়তানের দলভূক্ত । সে বিদ্রোহী । সে যে টিকিয়া থাকে সে কেবল মাত্র গায়ের জোরে । তাও সে থাকিত না, কারণ, কতটুকুই বা তাহার গায়ে জোর ; কিন্তু প্রকৃতি তাহ হইতেও বুঝি সৌন্দৰ্য্য অভিব্যক্ত করিবেন।