পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অচলিত) দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সমালোচন | অনাবশ্যক । আমরা বর্তমানের জীব । কোন জিনিষ বৰ্ত্তমানের পরপারে প্রত্যক্ষের বাহিরে গেলেই আমাদের হাতছাড়া হইবার যে হয় । যাহা পাইতেছি তাহা প্রত্যহই হারাইতেছি। আজ যে ফুলের আভ্ৰাণ লইয়াছি, কাল সকালে তাহা আর রহিল না, কাল বিকালে তাহার স্মৃতিও চলিয়া গেল। এমন কত ফুলের ভ্ৰাণ লইয়াছি, কত পার্থীর গান শুনিয়াছি, কত মুখ দেখিয়াছি, কত কথা কহিয়াছি, কত মুখ দুঃখ অনুভব করিয়াছি, তাহারা নাই, এবং তাহারা এককালে ছিল বলিয়া মনেও নাই । যদি বা মনে থাকে সে কি আর প্রত্যক্ষের মত আছে ? তাহা একটি নিরাকার অথবা কেবলমাত্র ছায়ার মত জ্ঞানে পৰ্য্যবসিত হইয়াছে। অমুক ঘটনা ঘটিয়াছে এইরূপ একটা জ্ঞান আছে মাত্র, অমুককে জানিতাম এইরূপ একটা সত্য অবগত আছি বটে ! কেবল মাত্র জ্ঞানে যাহাকে জানি তাহাকে কি আর জানা বলে, তাহাকে মানিয়া লওয়া বলে । অনেক সময়ে আমাদের কানে শব্দ আসে, কিন্তু তাহাকে শোনা বলি না ; কারণ সে শব্দটা আমাদের কান আছে বলিয়াই শুনিতেছি, আমাদের মন আছে বলিয়া শুনিতেছি না । কান বেচারার না শুনিয়া থাকিবার যো নাই, কিন্তু মনটা তখন ছুটি লইয়া গিয়াছিল । তেমনি আমরা যাহা জ্ঞানে জানি তাহা না জানিয়া থাকিবার যো নাই বলিয়াই জানি ; সাক্ষী আনিয়া প্রমাণ করিয়া দিলেই জ্ঞানকে জানিতেই হইবে—সে যত বড় লোকটাই হউক না কেন, এ আইনের কাছে তাহার নিষ্কৃতি নাই । কিন্তু উহার উদ্ধে আর জোর খাটে না । তেমনি আমরা অনেক অপ্রত্যক্ষ অতীত ঘটনা ঘটিয়াছিল বলিয়া জানি, কিন্তু আর তাহ অনুভব করিতে পারি না । মাঝে মাঝে অনুভব করিতে চেষ্টা করি, ভান করি, কিন্তু বৃথা ! কিন্তু মাঝে মাঝে এমন হয় না কি, যখন অতীত ঘটনার নামে বহুবিধ ওয়ারেন্ট করিয়াও কিছুতেই মনের সম্মুখে তাহাকে আনিতে পারা গেল না, এমন কি যখন