পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՖԳԵ রবীন্দ্র-রচনাবলী তাতে করে আরও একটি পাবার পথ বন্ধ হয় নি। সেটিকে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি— সেও আমার অ্যাফিনিটি দেখতে পেয়েছে। তার পরে ? তার পরে আমি যদি জয় করতে না পারি তাহলে আমি কাপুরুষ । বিমলার আত্মকথা আমার লজ্জা যে কোথায় গিয়েছিল তাই ভাবি । নিজেকে দেপবার আমি একটুও সময় পাই নি—আমার দিনগুলো রাতগুলো আমাকে নিয়ে একেবারে ঘূর্ণার মতো ঘুরছিল। তাই সেদিন লজ্জা আমার মনের মধ্যে প্রবেশ করবার একটুও ফাক পায় নি । একদিন আমার সামনেই আমার মেজো জা হাসতে হাসতে আমার স্বামীকে বললেন, ভাই ঠাকুরপে, তোমাদের এ-কাঁড়তে এতদিন বরাবর মেয়েরাই কেঁদে এসেছে, এইবার পুরুষদের পালা এল, এখন থেকে আমরাষ্ট কাদাব । কী বল ভাই ছোটোরানী ? রণবেশ তো পরেছ, রণরঙ্গিণী, এবার পুরুষের বুকে কষে হানো শেল । এই বলে আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত তিনি একবার তার চোখ বুলিয়ে নিলেন । আমার সাজে সজ্জায়, ভাবে গতিকে ভিতরের দিক থেকে একট। কেমন রঙের ছটা ফুটে উঠছিল, তার লেশমাত্র মেজো জায়ের চোখ এড়াতে পারে নি । আজ আমার এ-কথা লিখতে লজ্জ হচ্ছে কিন্তু সেদিন আমার কিছুই লজ্জা ছিল না । কেননা সেদিন আমার সমস্ত প্রকৃতি আপনার ভিতর থেকে কাজ করছিল, কিছুই বুঝে স্থঝে করি নি । আমি জানি সেদিন আমি একটু বিশেষ সাজগোজ করতুম। কিন্তু সে যেন অন্তমনে । আমার কোন সাজ সন্দীপবাবুর বিশেষ ভালো লাগত তা আমি স্পষ্ট বুঝতে পারতুম। তা ছাড়া আন্দাজে বোঝবার দরকার ছিল না। সন্দীপবাবু সকলের সামনেই তার আলোচনা করতেন। তিনি আমার সামনে আমার স্বামীকে একদিন বললেন, নিখিল, যেদিন আমাদের মক্ষীরানীকে আমি প্রথম দেখলুম—সেই জরির-পাড়-দেওয়া কাপড় পরে চুপ করে বসে, চোখ দুটো যেন পথ-হারানো তারার মতো অসীমের দিকে তাকিয়ে—যেন কিসের সন্ধানে কার অপেক্ষায় অতলস্পর্শ অন্ধকারের তীরে হাজার হাজার বৎসর ধরে এই রকম করে তাকিয়ে,-তখন আমার বুকের ভিতরটা কেঁপে উঠল—মনে হল ওঁর অস্তরের অগ্নিশিখা যেন বাইরে কাপড়ের