পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঘরে-বাইরে >ayう যারা বরাবর বাঘের মতো দেখে এসেছে তারাই আচমকা ঘুম থেকে জেগে উঠেই মনে করে আকাজের অপথ দিয়েই তারা তাড়াতাড়ি সংসারে তরে যাবে । খুব একটা কড়া জবাব দেবার জগুই যখন কোমর বেঁধে দাড়াচ্ছি এমন সময় নিখিল এল। চন্দ্রনাথবাবু উঠে মক্ষীর দিকে চেয়ে বললেন, আমি এখন যাই, মা, আমার কাজ আছে। তিনি চলে যেতেই আমি আমার সেই ইংগ্লিজি বইটা দেখিয়ে নিখিলকে বললুম, মক্ষীরানীকে এই বইটার কথা বলছিলুম। পৃথিবীর সাড়ে পনেরো জানা মানুষকে মিথ্যের দ্বারা ফাকি দিতে হয় আর এই ইস্কুলমাস্টারের চিরকেলে ছাত্রটিকে সত্যের দ্বারা ফাকি দেওয়াই সহজ । নিখিলকে জেনেশুনে ঠকতে দিলেই তবে ও ভালো করে ঠকে । তাই ওর সঙ্গে দেখা-বিস্তির খেলাই ভালো খেলা । নিখিল বইটার নাম পড়ে দেখে চুপ ক’রে রইল। আমি বললুম, মানুষ নিজের এই বাসের পৃথিবীটাকে নানান কথা দিয়ে ভারি অস্পষ্ট করে তুলেছে, এই সব লেখকের ঝাটা হাতে করে উপরকার ধুলে উড়িয়ে দিয়ে ভিতরকার বস্তটাকে স্পষ্ট করে তোলবার কাজে লেগেছে ; তাই জামি বলছিলুম, এ বইটা তোমার পড়ে দেখা তালে । নিখিল বললে, আমি পড়েছি । আমি বললুম, তোমার কী বোধ হয় ? নিখিল বললে, এ-রকম বই নিয়ে যারা সত্য-সত্য ভাবতে চায় তাদের পক্ষে ভালো—যার ফাকি দিতে চায় তাদের পক্ষে বিষ । আমি বললুম, তার অর্থ টা কী ? নিখিল বললে, দেখো, আজকের দিনের সমাজে যে-লোক এমন কথা বলে যে, নিজের সম্পত্তিতে কোনো মানুষের একান্ত অধিকার নেই সে যদি নিলোভ হয় তবেই তার মুখে এ-কথা সাঙ্গে—আর সে যদি স্বভাবতই চোর হয় তবে কথাটা তার মুখে ঘোর মিথ্যে। প্রবৃত্তি যদি প্রবল থাকে তবে এ-সব বইয়ের ঠিক মানে পাওয়া যাবে না । আমি বললুম, প্রঃত্তিই তো প্রকৃতির সেই গ্যাসপোস্ট ষার আলোতে আমরা এ-সব রাস্তার খোজ পাই। প্রবৃত্তিকে যারা মিথ্যে বলে তারা চোখ উপড়ে ফেলেই দিব্যদৃষ্টি পাবার দুরাশ করে। নিখিল বললে, প্রবৃত্তিকে আমি তখনই সত্য বলে মনে মানি, যখন তার সজে