পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\ల్ఫిత్రి ब्रवैौटल-ब्रछनांवलौ আমিই তাকে মৃত্যুর মধ্যে পাঠিয়েছি, সে যে কোনো ভয় করে নি সে তারই মহত্ব কিন্তু এর পরে আমি বেঁচে থাকব কেমন করে ? অমূল্যর কোনো চিহ্নই আমার কাছে ছিল না—কেবল ছিল তার সেই ভাইফোটার প্রণামী—সেই পিস্তলটি । মনে হল এর মধ্যে দৈবের ইঙ্গিত রয়েছে। আমার জীবনের মূলে যে কলঙ্ক লেগেছে, বালক-বেশে আমার নারায়ণ সেটি ঘুচিয়ে দেবার উপায় আমার হাতে রেখে দিয়েই কোথায় অদৃশু হয়ে গেছেন। কী ভালোবাসার দান। কী পাবন-মন্ত্র তার মধ্যে প্রচ্ছন্ন । বাক্স খুলে পিস্তলটি বের করে দুই হাতে তুলে আমার মাথায় ঠেকালুম। ঠিক সেই মুহূর্তেই আমাদের ঠাকুরবাড়ি থেকে আরতির কাসরঘণ্টা বেজে উঠল। আমি ভূমিষ্ঠ হয়ে প্রণাম করলুম। রাত্রে লোকজনদের পিঠে খাওয়ানো গেল । মেজোরানী এসে বললেন, নিজে নিজেই খুৰ ধুম করে জন্মতিথি করে নিলি যা হ’ক । আমাদের বুঝি কিছু করতে দিবি নে ? এই বলে তিনি তার সেই গ্রামোফোনটাতে যত রাজ্যের নটীদের মিহি চড়া স্বরের দ্রুত তানের কসরত শোনাতে লাগলেন ; মনে হতে লাগল যেন গন্ধৰ্বলোকের স্বরওয়ালা ঘোড়ার আস্তাবল থেকে চিহি চিহি শব্দে হ্ৰেষধিবনি উঠছে। খাওয়ানো শেষ করতে অনেক রাত হয়ে গেল। ইচ্ছা ছিল আজ রাতে আমার স্বামীর পায়ের ধুলো নেব । শোবার ঘরে গিয়ে দেখি তিনি অকাতরে ঘুমোচ্ছেন। আজ সমস্ত দিন তার অনেক ঘুরাঘুরি অনেক ভাবনা গিয়েছে। খুব সাবধানে মশারি একটুখানি খুলে তার পায়ের কাছে আস্তে আস্তে মাথা রাখলুম। চুলের স্পর্শ লাগতেই ঘুমের ঘোরে তিনি তার পা দিয়ে আমার মাথাটা একটু ঠেলে দিলেন । পশ্চিমের বারানায় গিয়ে বসুলুম। দূরে একটা শিমুল গাছ অন্ধকারে কঙ্কালের মতো দাড়িয়ে আছে—তার সমস্ত পাতা ঝরে গিয়েছে—তারই পিছনে সপ্তমীর চাদ ধীরে ধীরে অস্ত গেল । আমার হঠাৎ মনে হল আকাশের সমস্ত তারা যেন আমাকে ভয় করছে, রাত্রিবেলাকার এই প্রকাও জগৎ আমার দিকে যেন আড়চোখে চাইছে। কেননা আমি ষে একলা ; একলা মানুষের মতো এমন স্বষ্টিছাড়া আর কিছুই নেই। যার সমস্ত আত্মীয়স্বজন একে একে মরে গিয়েছে সেও একলা নয়, মৃত্যুর আড়াল থেকেও সে সঙ্গ পায়। কিন্তু যার সমস্ত আপন মাহূব পাশেই রয়েছে তবু কাছে নেই, যে-মানুষ পরিপূর্ণ সংসারের সকল অঙ্গ থেকেই একেবারে খসে পড়ে গিয়েছে, মনে হয় যেন