পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○ミb" ब्रवैौटल-ब्र5नांवलौ ভাত ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে। বিমল কোনো সাড়া দিলে না। মেজোরানী বললেন, ও কী, এখনো তোর খাওয়া হয় নি বুঝি ? বেলা যে ঢের হল –এই বলে জোর করে তাকে ধরে নিয়ে গেলেন । সেই ছ-হাজার টাকার ডাকাতির সঙ্গে এই লোহার সিন্দুকের টাকা বের করে নেওয়ার যে যোগ আছে তা বুঝতে পারলুম। কী রকমের যোগ সে-কথা জানতেও ইচ্ছা করল না—কোনোদিন সে-প্রশ্নও করব না । বিধাতা আমাদের জীবন-ছবির দাগ একটু ঝাপসা করেই টেনে দেন—আমরা নিজের হাতে সেটাকে কিছু-কিছু বদলে মুছে পুরিয়ে দিয়ে নিজের মনের মতো একটা স্পষ্ট চেহারা ফুটিয়ে তুলব। এই তার অভিপ্রায়। স্বষ্টিকর্তার ইশারা নিয়ে নিজের জীবনটাকে নিজে স্বষ্টি করে তুলব, একটা বড়ো আইডিয়াকে আমার সমস্তর মধ্য দিয়ে ব্যক্ত করে দেখাব এই বেদনা বরাবর আমার মনে আছে। এই সাধনাতে এতদিন কাটিয়েছি। প্রবৃত্তিকে কত বঞ্চিত করেছি নিজেকে কত দমন করেছি সেই অস্তরের ইতিহাস অন্তর্যামীই জানেন । শক্ত কথা এই যে, কারও জীবন একলার জিনিস নয়—স্বষ্টি যে করবে সে নিজের চারদিককে নিয়ে যদি স্বষ্টি না করে তবে ব্যর্থ হবে । মনের মধ্যে তাই একান্ত একটা প্রয়াস ছিল যে বিমলকেও এই রচনার মধ্যে টানব। সমস্ত প্রাণ দিয়ে তাকে ভালো যখন বাসি তখন কেন পারব না এই ছিল আমার জোর । এমন সময় স্পষ্ট দেখতে পেলুম নিজের সঙ্গে সঙ্গে নিজের চারিদিককে যারা সহজেই স্বষ্টি করতে পারে তারা একজাতের মানুষ, আমি সে-জাতের না। আমি মন্ত্র নিয়েছি, কাউকে মন্ত্র দিতে পারি নি। যাদের কাছে আপনাকে সম্পূর্ণ ঢেলে দিয়েছি তারা আমার আর-সবই নিয়েছে কেবল আমার এই অন্তরতম জিনিসটি ছাড়া। আমার পরীক্ষা কঠিন হল । সব-চেয়ে যেখানে সহায় চাই সব-চেয়ে সেখানেই একলা হলুম। এই পরীক্ষাতেও জিতব এই আমার পণ রইল। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যস্ত আমার দুর্গম পথ আমার একলারই পথ । আজ সন্দেহ হচ্ছে আমার মধ্যে একট। অত্যাচার ছিল । বিমলের সঙ্গে আমার সম্বন্ধটিকে একটা স্বকঠিন ভালোর ছাচে নিখুত করে ঢালাই করব আমার ইচ্ছার ভিতরে এই একটা জবরদস্তি আছে। কিন্তু মানুষের জীবনটা তো ছাচে ঢালবার নয়। আর, ভালোকে জড়বন্ত মনে করে গড়ে তুলতে গেলেই মরে-গিয়ে সে তার ভয়ানক শোধ নেয় । এই জুলুমের জন্তেই আমরা পরস্পরের সঙ্গে ভিতরে ভিতরে তফাত হয়ে গেছি