পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহিত্য HN ව් পূর্বেই বলিয়াছি, মনোরাজ্যের কথা আসিয়া পড়িলে সত্যতা বিচার করা কঠিন হইয়া পড়ে। কালোকে কালো প্রমাণ করা সহজ, কারণ অধিকাংশের কাছেই তাহ নিশ্চয় কালো—কিন্তু ভালোকে ভালো প্রমাণ করা তেমন সহজ নহে, কারণ এখানে অধিকাংশের একমত সাক্ষ্য সংগ্রহ করা কঠিন। এখানে অনেকগুলি মুশকিলের কথা জাসিয়া পড়ে। অধিকাংশের কাছেই যাহা ভালো, তাহাই কি সত্য ভালো, না, বিশিষ্ট সম্প্রদায়ের কাছে যাহা ভালো, তাহাই সত্য ভালো ? যদি বিজ্ঞানের কথা ছাড়িয়া দেওয়া যায়, তবে প্রাকৃতবস্তুসম্বন্ধে এ-কথা নিশ্চয় বলিতে হয় যে, অধিকাংশের কাছে যাহা কালো, তাহাই সত্য কালো । পরীক্ষার দ্বারা দেখা গেছে, এ-সম্বন্ধে মতভেদের সম্ভাবনা এত অল্প যে, অধিক সাক্ষ্য সংগ্ৰহ করিবার কোন প্রয়োজন হয় না । কিন্তু ভালো যে ভালোই এবং কত ভালো, তাহা লইয়া মতের এত অনৈক্য ঘটিয়া থাকে যে, সে-সম্বন্ধে কিরূপ সাক্ষ্য লওয়া উচিত, তাহ স্থির করা কঠিন হয়। বিশেষ কঠিন এই জঙ্গ, সাহিত্যকারদের শ্রেষ্ঠ চেষ্টা কেবল বর্তমান কালের জন্ত নহে । চিরকালের মহন্তসমাজই তাহাদের লক্ষ্য । যাহা বর্তমান ও ভবিস্তং কালের জন্য লিখিত, তাহার অধিকাংশ সাক্ষী ও বিচারক বর্তমান কাল হইতে কেমন করিয়া মিলিবে ? ইহ প্রায়ই দেখা যায় যে, যাহা তৎসাময়িক ও তৎস্থানিক, তাহাই অধিকাংশ লোকের কাছে সর্বপ্রধান আসন অধিকার করে । কোনো একটি বিশেষ সময়ের সাক্ষিসংখ্যা গণনা করিয়া সাহিত্যের বিচার করিতে গেলে অবিচার হইবার সম্পূর্ণ সম্ভাবনা আছে। এইজন্য বর্তমান কালকে অতিক্রম করিয়া সর্বকালের দিকেই সাহিত্যকে লক্ষ্যনিবেশ করিতে হয় । কালে কালে মাকুষের বিচিত্র শিক্ষা, ভাব ও অবস্থার পরিবর্তনসত্ত্বেও যে-সকল রচনা আপন মহিমা রক্ষা করিয়া চলিয়াছে, তাহাদেরই অগ্নিপরীক্ষণ হইয়া গেছে । মন আমাদের সহজগোচর নয় এবং অল্পসময়ের মধ্যে আবদ্ধ করিয়া দেখিলে অবিশ্রাম গতির মধ্যে তাহার নিত্যানিত্য সংগ্ৰহ করিয়া লওয়া আমাদের পক্ষে দুঃসাধ্য হয়। এইজন্ত স্থবিপুল কালের পরিদর্শনশালার মধ্যেই মাচুষের মানসিক বস্তুর পরীক্ষা করিয়া দেখিতে হয়—ইহা ছাড়া নিশ্চয় জবশারণের চূড়ান্ত উপায় নাই। কিন্তু কাজ চলিবার মতো উপায় না থাকিলে সাহিত্যে অরাজকতা উপস্থিত হইত। হাইকোর্টের আপিল-আদালতে ষে জজ-আদালতের সমস্ত বিচারই পর্যন্ত হইয়া যায়, br-8&