পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

€\98 রবীন্দ্র-রচনাবলী যোগ দিলে আরও অনেকদূর চোখে পড়ে, অধ্যাত্মদৃষ্টি খুলিয়া গেলে দৃষ্টিক্ষেত্রের আর সীমা পাওয়া যায় না । অতএব যে-দেখাতে আমাদের মনের বড়ো অংশ অধিকার করে, সেই দেখাতেই আমরা বেশি তৃপ্তি পাই। ফুলের সৌন্দর্ষের চেয়ে মানুষের মুখ আমাদিগকে বেশি টানে, কেন না, মানুষের মুখে শুধু আকৃতির স্বষম নয়, তাহাতে চেতনার দীপ্তি, বুদ্ধির ক্ষতি, হৃদয়ের লাবণ্য আছে, তাহারা আমাদের চৈতন্যকে বুদ্ধিকে হৃদয়কে দখল করিয়া বসে। তাহা আমাদের কাছে শীঘ্ৰ ফুরাইতে চায় না। আবার মানুষের মধ্যে যাহারা নরোত্তম, ধরাতলে যাহার ঈশ্বরের মঙ্গলস্বরূপের প্রকাশ, তাহার। আমাদের মনে এতদূর পর্যন্ত টান দেন, সেখানে আমরা নিজেরাই নাগাল পাই না। এইজন্ত যে-রাজপুত্র মানুষের দুঃখমোচনের উপায়ুচিস্তা করিতে রাজ্য ছাড়িয়া চলিয়া গেলেন, তাহার মনোহারিতা মানুষকে কত কাব্য কত চিত্র রচনায় লাগাইয়াছে, তাহার সীমা নাই । এইখানে সন্দিগ্ধ লোকেরা বলিবেন, সৌন্দর্য হইতে যে ধর্মনীতির কথা আসিয়া পড়িল । দুটোতে ঘোলাইয়া দিবার দরকার কী । যাহা ভালো, তাহা ভালো এবং যাহা স্বন্দর, তাহা সুন্দর। ভালো আমাদের মনকে একরকম করিয়া টানে, সুন্দর আমাদের মনকে আর-একরকম করিয়া টানে—উভয়ের আকর্ষণ-প্রণালীর বিভিন্নতা আছে বলিয়াই ভাষায় দুটোকে দুই নাম দিয়া থাকে। যাহা ভালো তাহার প্রয়োজনীয়তা আমাদিগকে মুগ্ধ করে, আর যাহা মুন্দর, তাহা যে কেন মুগ্ধ করে, সে আমরা জানি না। এ-সম্বন্ধে আমার বলিবার একটা কথা এই যে, মঙ্গল আমাদের ভালো করে বলিয়াই যে তাহাকে আমরা ভালো বলি, ইহা বলিলে সবটা বলা হয় না । যথার্থ যে মঙ্গল, তাহ আমাদের প্রয়োজনসাধন করে এবং তাঁহা স্বন্দর ;—অর্থাৎ প্রয়োজনসাধনের উর্ধ্বেও তাহার একটা অহেতুক আকর্ষণ আছে। নীতিপণ্ডিতেরা জগতের প্রয়োজনের দিক হইতে নীতি-উপদেশ দিয়া মঙ্গল প্রচার করিতে চেষ্টা করেন এবং কবির মঙ্গলকে তাহার অনির্বচনীয় সৌন্দর্ধমূর্তিতে লোকের কাছে প্রকাশ করিয়া থাকেন । বস্তুত মঙ্গল যে স্বন্দর, সে আমাদের প্রয়োজনসাধন করে বলিয়া নহে। ভাত আমাদের কাজে লাগে, কাপড় আমাদের কাজে লাগে, ছাতাষ্ণুতা আমাদের কাজে লাগে ; ভাতকাপড়-ছাতাজুতা আমাদের মনে সৌন্দর্বের পুলক সঞ্চার করে না। কিন্তু লক্ষ্মণ রামের সঙ্গে সঙ্গে বনে গেলেন, এই সংবাদে আমাদের মনের মধ্যে ৰীণার