পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

¢२४” রবীন্দ্র-রচনাবলী কালিদাসও কবিতাই লিখিয়াছেন, কিন্তু দি নাগাচার্যের সহিত বাদপ্রতিবাদ করেন নাই। সাধারণত কবিদের নিন্দা-অসহিষ্ণু বলিয়া খ্যাতি আছে ; কিন্তু সেই অসহিষ্ণুতা লইয়া ( দুই-একজন ছাড়া ) তাহারা নিজেরাই ক্ষোভ অনুভব করিয়াছেন, সাহিত্যকে ক্ষুব্ধ করিয়া তোলেন নাই । যখন তাহাদের লেখার প্রতি কেহ কলঙ্ক আরোপ করিয়াছে তখন সেই কলঙ্কভঞ্জনের ভার তাহারা কালের হস্তেই সমর্পণ করিয়াছেন । র্তাহাদের মধ্যে যাহারা ভাগ্যবান তাহাদের লেখা সম্বন্ধে ইহাই প্রমাণ হইয়া গেছে যে, তাহাদের রচনার কলসে আলংকারিক ছিদ্র, একটা কেন, এক-শটা থাকিতে পারে, কিন্তু তবু তাহা হইতে রস বাহির হইয়া যায় নাই। সাহিত্যে এই কলঙ্কভঞ্জনের পালা অনেক দিন হইতে অনেকবার অভিনীত হইয়াছে, র্যাহারা আলংকারিক তাহাদের গঞ্জনা হইতে কবিরা বারবার রক্ষণ পাইয়াছেন । s ঘরে-বাইরে সম্বন্ধে রসবোধ লইয়া যদি কথা উঠিত তবে সে-কথা যতই কটু হউক নীরব থাকিতাম। কিন্তু যে-কথা উঠিয়াছে তাহ সাহিত্যসীমানার বাহিরের জিনিস। তাহা যুক্তির অধিকারের মধ্যে, স্বতরাং তাহা লইয়া তর্ক চলে, এবং তর্ক না চালাইলে কর্তব্যপালন করা হয় না। কারণ, যাহা অস্কায় তাহাকে সহ করিয়া গেলে সাধারণের প্রতি অন্যায় করা হয় । ঘরে-বাইরে বাহির হইবার পরেই আমার বিরুদ্ধে একটা নালিশ শোনা গেল যে, আমি এই উপন্যাসে সীতার প্রতি অসম্মান প্রকাশ করিয়াছি । কথাটা এতই অদ্ভুত যে আমি আশা করিয়াছিলাম যে, এমন কি, আমাদের দেশেও ইহা গ্রাহ হইবে না । কিন্তু দেখিলাম, লোকে উৎসাহের সঙ্গে ইহা গ্রহণ করিয়াছে ; এবং জনগণের নিন্দায় একদা সীতা যেরূপ নির্বাসিত হইয়াছিলেন এ-গ্রন্থও সেইরূপ গণ্যমান্তদের সভা ও লাইব্রেরি-ঘরের টেবিল হইতে নির্বাসিত হইতে থাকিল। এটাকে সামান্য ব্যক্তিগত হিসাবে দেখিলে ইহাতে বিশেষ ক্ষতিবৃদ্ধি নাই। কিন্তু যে-কোনো প্রভাবে মানুষের বিচারবুদ্ধিকে বিকৃত করে, সেই প্রভাব যদি ব্যাপক হইয়া উঠিতে থাকে তবে সেটাকে সাধারণের পক্ষে ক্ষতিজনক বলিয়া গণ্য করিতে হইবে । অতএব ঘরে-বাইরের গ্রন্থের যে-অপরাধ বানাইয়া তুলিয়া আমার প্রতি কেবলই আক্রোশবর্ষণ চলিতেছে সেই অপরাধের অভিযোগটাকে বিশ্লেষণ করিয়া দেখা দরকার । মহাকাব্যে নাটকে বা নভেলে যে আখ্যানবস্তু পাওয়া যায় তাহার নানা