পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রক্তকরবী VG অধ্যাপক । সব জিনিসকে টুকরো করে আনাই এদের পদ্ধতি । কিন্তু তাও বলি, এখানকার মরা ধনের AKING CASAS (SK INGKS GREN VONNAS 5e নন্দিনী । আমার রঞ্জনকে এখানে আনলে এদের মরা পাজরের ভিতর প্রাণ নেচে উঠবে। অধ্যাপক। একা নািস্পনীকে নিয়েই হকপুরীর সর্দােরর হতবুদ্ধি হয়ে গেছে রঞ্জনকে আনলে তাদের হবে নন্দিনী । ওরা জানে না। ওরা কী অদ্ভুত । ওদের মাঝখানে বিধাতা যদি খুব একটা হাসি হেসে ওঠেন, তা হলেই ওদের চটকা ভেঙে যেতে পারে । রঞ্জন বিধাতার সেই হাসি । অধ্যাপক । দেবতার হাসি সূর্যের আলো, তাতে বরফ গলে, কিন্তু পাথর টলে না। আমাদের সর্দারদের টলাতে গেলে গায়ের জোর চাই । নন্দিনী । আমার রঞ্জনের জোর তোমাদের শঙ্খিনীনদীর মতো । ঐ নদীর মতোই সে যেমন হাসতেও পারে তেমনি ভাঙতেও পারে । অধ্যাপক, তোমাকে আমার আজকের দিনের একটি গোপন খবর দিই। "আজ রঞ্জনের সঙ্গে আমার দেখা হবে । অধ্যাপক । জানলে কী করে । V নন্দিনী । হবে হবে, দেখা হবে । খবর এসেছে । অধ্যাপক । সর্দারের চোখ এড়িয়ে কোন পথ দিয়ে খবর আসবে। নন্দিনী । যে-পথে বসন্ত আসবার খবর আসে সেই পথ দিয়ে । তাতে লেগে আছে আকাশের রঙ, বাতাসের লীলা । অধ্যাপক । তার মানে, আকাশের রঙে বাতাসের লীলায় উড়ো খবর এসেছে। নন্দিনী । যখন রঞ্জন আসবে তখন দেখিয়ে দেব উড়ো খবর কেমন করে মাটিতে এসে পীেছল । অধ্যাপক । রঞ্জনের কথা উঠলে নন্দিনীর মুখ আর থামতে চায় না। থাকগে, আমার তো আছে বস্তুতত্ত্ববিদ্যা, তার গহবরের মধ্যে ঢুকে পড়িগে, আর সাহস হচ্ছে না । (খানিকটা গিয়ে ফিরে এসে) নন্দিনী, একটা কথা তোমাকে জিজ্ঞাসা করি, যক্ষপুরীকে তোমার ভয় করছে না ? নন্দিনী । ভয় করবে। কেন । অধ্যাপক। গ্রহণের সূর্যকে জন্তুরা ভয় করে, পূর্ণ সূর্যকে ভয় করে না। যক্ষপুরী গ্ৰহণলাগা পুরী । সোনার গর্তের রাহুতে ওকে খাবলে খেয়েছে । ও নিজে আস্ত নয়, কাউকে আস্ত রাখতে চায় না । আমি তোমাকে বলছি, এখানে থেকে না । তুমি চলে গেলে ঐ গর্তগুলো আমাদের সামনে আরো ইহা করে উঠবে ; তবু বলছি, পালাও । যেখানকার লোকে দস্যবৃত্তি করে মা বসুন্ধরার আঁচলকে টুকরো টুকরো করে ছেড়ে না, সেইখানে রঞ্জনকে নিয়ে সুখে থাকোগে । (কিছুদূর গিয়ে ফিরে এসে) নন্দিনী, তোমার ডান হাতে ঐ-যে রক্তকরবীর কঙ্কণ, ওর থেকে একটি ফুল খসিয়ে দেবে ? নন্দিনী । কেন, কী করবে তুমি । অধ্যাপক । কতবার ভেবেছি, তুমি যে রক্তকরবীর আভরণ পর, তার একটা কিছু মানে আছে। नन्निी । उात्रिी (टा छानि न की भान । অধ্যাপক । হয়তো তোমার ভাগ্যপুরুষ জানে । এই রক্ত-আভায় একটা ভয় লাগানো রহস্য আছে, শুধু মাধুর্য নয় । নন্দিনী । আমার মধ্যে ভয় ? অধ্যাপক । সুন্দরের হাতে রক্তের তুলি দিয়েছে বিধাতা। জানি নে, রাঙা রঙে তুমি কী লিখন লিখতে এসেছি। মালতী ছিল, মল্লিকা ছিল, ছিল চামেলি ; সব বাদ দিয়ে এ ফুল কেন বেছে নিলে। জান, মানুষ না জেনে অমনি করে নিজের ভাগ্য বেছে নেয় ? নন্দিনী । রঞ্জন আমাকে কখনো কখনো আদর করে বলে রক্তকরবী । জানি নে আমার কেমন মনে হয়, আমার রঞ্জনের ভালোবাসার রঙ রাঙা, সেই রঙ গলায় পরেছি, বুকে পরেছি, হাতে পারেছি।