পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88V রবীন্দ্র-রচনাবলী রসিক । দেখেছি বৈকি, নইলে কি ঐ রুমালখানার জন্যে এত লড়াই করি । আর ঐ-যে “ন’ অক্ষরের কথাগুলো আমার মাথার মধ্যে এখনো এক বঁটাক ভ্ৰমরের মতো গুঞ্জন করে বেড়াচ্ছে তাদের সামনে কি একটি কমলবনবিহারিণী মানসীমূর্তি নেই। শ্ৰীশ। রসিকবাবু, আপনার ঐ মগজটি একটি মৌচাক-বিশেষ, ওর ফুকোরে ফুকোরে কবিত্বের মধু। আমাকে সুদ্ধ মাতাল করে দেবেন দেখছি। দীর্ঘনিশ্বাসপতন পুরুষবেশী শৈলবালার প্রবেশ শৈলবালা । আমার আসতে অনেক দেরি হয়ে গেল, মাপ করবেন শ্ৰীশবাবু। শ্ৰীশ । আমি এই সন্ধেবেলায় উৎপাত করতে এলুম, আমাকেও মাপ করবেন অবলাকান্তবাবু। শৈলীৱালা । রোজ সন্ধেবেলায় যদি এইরকম উৎপাত করেন তা হলে মাপ করব, নইলে নয় । শ্ৰীশ । আচ্ছা রাজি, কিন্তু এর পরে যখন অনুতাপ উপস্থিত হবে তখন প্ৰতিজ্ঞা স্মরণ করবেন। শৈলবালা । আমার জন্যে ভাববেন না, কিন্তু আপনার যদি অনুতাপ উপস্থিত হয় তা হলে আপনাকে দেব | ಗಿಣ್ಣೆ সেই ভরসায় যদি থাকেন তা হলে অনন্তকাল অপেক্ষা করতে হবে । টুলুক। সিকদাদা,তুমি শ্ৰীশবাবুর পকেটা দিকে হাত বাড়ােচ্ছ কেন। বুড়ে বয়সে পাটকাটা ব্যবসা &s রসিক । না ভাই, সে ব্যাবসা তোদের বয়সেই শোভা পায়। একখানা রুমাল নিয়ে শ্ৰীশবাবুতে আমাতে তকরার চলছে, তোকে তার মীমাংসা করে দিতে হবে। শৈলবালা । কিরকম । রসিক । প্রেমের বাজারে বড়ো মহাজানি করবার মূলধন আমার নেই। আমি খুচরো মালের কারবারীরুমালটা, চুলের দড়িটা, ছেড়া কাগজে দু-চারটে হাতের অক্ষর, এই সমস্ত কুড়িয়ে-বাড়িয়ে আমাকে সন্তুষ্ট থাকতে হয়। শ্ৰীশবাবুর যেরকম মূলধন আছে তাতে উনি বাজার-সুদ্ধ পাইকের দরে কিনে নিতে পারেন- রুমাল কেন, সমস্ত নীলাঞ্চলে অর্ধেক ভাগ বসাতে পারেন। আমরা যেখানে চুলের দড়ি গলায় জড়িয়ে মরতে ইচ্ছে করি উনি যে সেখানে আগুলফবিলম্বিত চিকুররাশির সুগন্ধ ঘনান্ধকারের মধ্যে সম্পূর্ণ অস্ত যেতে পারেন । উনি উদ্ভাবৃত্তি করতে আসেন কেন । শ্ৰীশ। অবলাকান্তবাবু, আপনি তো নিরপেক্ষ ব্যক্তি, রুমালখানা এখন আপনার হাতেই থাক, উভয় পক্ষের বক্তৃতা শেষ হয়ে গেলে বিচারে যার প্রাপ্য হয় তাকেই দেবেন। শৈলবালা। (রুমালখানি পকেটে পুরিয়া) আমাকে আপনি নিরপেক্ষ লোক মনে করছেন বুঝি ? এই কোণে যেমন একটি “ন’ অক্ষর লাল সুতোয় সেলাই করা আছে আমার হৃদয়ের একটি কোণে খুঁজলে দেখতে পাবেন ঐ অক্ষরটি রক্তের বর্ণে লেখা । এ রুমাল আমি আপনাদের কাউকেই দেব না । শ্ৰীশ । রসিকবাবু, এ কী রকম জবরদস্তি । আর, “ন’ অক্ষরটিও তো বড়ো ভয়ানক অক্ষর । রসিক । শুনেছি বিলিতি শাস্ত্রে ন্যায়ধর্মও অন্ধ, ভালোবাসাও অন্ধ। এখন দুই অন্ধে লড়াই হােক, যার বল বেশি তারই জিত হবে । শৈলবালা । শ্ৰীশবাবু, যার রুমাল আপনি তো তাকে দেখেন নি, তবে কেন কেবলমাত্র কল্পনার উপর নির্ভর করে ঝগড়া করছেন । শ্ৰীশ । দেখি নি কে বললে । শৈলবালা । দেখেছেন ? কাকে দেখলেন। “ন’ তো দুটি আছেশ্ৰীশ। দুটিই দেখেছি।--তা, এ রুমাল দুজনের ধারই হােক, দাবি আমি পরিত্যাগ করতে পারব না। রসিক । শ্ৰীশবাবু, বৃদ্ধের পরামর্শ শুনুন, হৃদয়গগনে দুই চন্দ্রের আয়োজন করবেন না : একশচন্দ্ৰস্তামোহতি ।