পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী א צר যাইবে সাপ্তাহিক দেশ পত্রে প্রকাশিত (২৫ চৈত্র ১৩৭৬ - ৩০ আষাঢ় ১৩৬৮) “পত্রাবলীতে । স্বতন্ত্র-প্রচারিত পুনশ্চ গ্রন্থে এই সকল পত্র হইতে প্রাসঙ্গিক অংশ সংকলিত হইয়াছে। প্ৰয়োজনীয় অন্যান্য তথ্যের কারণেও পুনশ্চ স্বতন্ত্র সংস্করণ বিশেষ দ্রষ্টব্য । “শিশুতীর্থ কবিতার বিশেষ উল্লেখ করা হইয়াছে বর্তমান গ্ৰন্থপরিচয়ের তৃতীয় অনুচ্ছেদে । ঐ কবিতার মূলে আছে The Child, যাহার রচনা ১৯৩০ খৃস্টাব্দে জর্মনির মিউনিক শহরে। এই রচনায় বিশেষ প্রেরণা জোগাইয়াছে জর্মনিতে খৃস্টজীবনের অপূর্ব নাট্যরূপ-দর্শন, ইহা অনেকেই জানেন । ইহার কয়েক মাস পরেই (১ ডিসেম্বর ১৯৩০) নিউইয়র্ক শহরে এক বক্তৃতায় কবি বলেন— The babe who was born centuries ago, brought exaltation to man. Not machinery, not associations, not organizations, but a human babe, and people were amazed. And when all the machinery will be rusted, he will live. -The Modern Review, July 1931, p. 48 শিশুতীর্থবিচিত্রা মাসিক পত্রে প্রথম প্রকাশের অব্যবহিত পরে, কবি যে নিবন্ধে উহার মর্মব্যাখ্যা করেন বলা যায়, তাহার অংশবিশেষ এ স্থলে সংকলনযোগ্য $ჭდfდilნil পশু যে যুগে একদা জন্মায়, চিরকাল সেই যুগেই সে থাকে। লক্ষ বৎসর ধরে বাঘ বাঘই আছে। মানুষ যুগে নব নব জন্মের ভিতর দিয়ে আপন আবরণ মোচন করতে করতে চলে। অতীতের খাচায় শিকল দিয়ে সে বাধা থাকে না । তার অভিসার নবজন্মের অভিমুখে ।-- সংসারে যখন শান্তি নেই, দৈন্য মরুবালুকায় অন্নের ক্ষেত লুপ্ত করেছে, অজ্ঞানের ভূপাকার নিরর্থকতায় আলোকের পথ অবরুদ্ধ, তখন উপরের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করি, হে নবজাত, হে নবজীবনের দূত, কোথায় তুমি ?- মাতার বেদনার ভিতর দিয়ে তুমি কি এসেছ, হে আদিত্যবণ মহান পুরুষ “তমসঃ পরস্তাৎ’ ? র্যারা মহান পুরুষ তারা আপন জন্মে সমস্ত মানুষের জন্যে নবজন্ম এনেছেন । তারা মানুষকে দান করেছেন অমর জীবনের অর্ঘ্য । কাকে বলে অমর জীবন ? মানুষের একটা জন্ম হল দৈহিক জীবনে । কালের দ্বারা সে জীবন পরিমিত, দিন গণনা করে তার দৈর্ঘ্য । তার দ্বিতীয় জন্ম অমিতায়ু। এই জন্মের জীবনকে পরিপূর্ণতার আদর্শে বিচার করতে হয়- জ্ঞানে প্ৰেমে কর্মে দেশকালের সীমা সে উত্তীৰ্ণ হয়ে যায় । এই জীবনকে কোনো মানুষ তার নিজের ব্যক্তিগত অধিকারের মধ্যে ধারণ করে রাখতে পারে না ; এইখানে সকল মানুষের চিরজীবনে সে জীবিত । অমর জীবনের ফল ফলে জ্ঞানে বিজ্ঞানে, সৌন্দর্যসৃষ্টিতে, বিশ্বকর্মে। মানুষ এর জন্যে প্ৰাণ দিয়েছে, দুঃখ পেয়েছে, ভুলেছে নিজের স্বার্থ, প্রমাণ করেছে তার দ্বিজত্ব । লাভের লোভে, শক্তির দম্ভে, বুদ্ধির বিকারে যখন তার দ্বিজত্বকে আচ্ছন্ন করে, তখন তার পশুধর্ম একেশ্বর হয়ে ওঠে। পশু যখন আপনি পশুত্বে সম্পূর্ণ বিরাজ করে তখন তাতে তার কোনো ক্ষতিই হয় না । কিন্তু মানুষের সংসারে পশুপ্রভাব সর্বনাশ আনে ; হয় জড়ত্বের তামসিকতায় সে জীবনমৃত হয়ে থাকে, নয় বন্যায় গিরিগাত্রের শিলাস্থলনের মতো দুনিবার আঘাতে প্ৰতিঘাতে পরস্পরের মধ্যে প্ৰলয় ঘটিয়ে তোলে । তখন ভাঙন ধরে তার সমস্ত রচনায়, দেবতার সিংহাসন দখল করে দানবে, পরম্পরের মধ্যে অকারণ ঈর্ষা কলহ আলোড়িত হয়ে ওঠে, উদ্দাম রিপুর বলগা খসিয়ে ফেলাকে মানুষ মনে করে পৌরুষ । এমনি করে কত প্ৰাচীন সভ্যতার জ্যোতিষ্ক আপনি আলো নিবিয়ে অখ্যাতির মধ্যে স্তব্ধ হয়ে আছে, কত সভ্যতা এমনিই রুদ্র সংঘাতে আপন চিতা জ্বালিয়ে আত্মহত্যার পথে চলেছে।-- তখনই অমৃতের জন্যে প্রার্থনার সময় । সেই অমৃত যন্ত্রে তৈরি হয় না। দূত জন্মলাভ করেন সেই অমৃত আপন প্ৰাণপাত্রে বহন করে। বিশ্বাসী ভক্ত অপেক্ষা করে থাকেন নবজন্মের অরুণোদয়ের