পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্ৰবন্ধ ( রসিকতার উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত আরো কয়েকটি দেখা গিয়েছে কিন্তু সুকুমারের অজস্র হাসোচ্ছাসের বিশেষত্ব তীর প্রতিভার যে স্বকীয়তার পরিচয় দিয়েছে তার ঠিক সমশ্রেণীয় রচনা দেখা যায় না। তঁর এই বিশুদ্ধ হাসির দানের সঙ্গে সঙ্গেই তীর অকাল-মৃত্যুর সকরুণতা পাঠকদের মনে চিরকালের জন্য জড়িত হয়ে রইল।

| と | 8 ○ গৌরীপুর ভবন

কালিম্পঙ উইলিয়াম পিয়ার্সন আকস্মিক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর খবর আমাদের নিকট পৌঁছিয়াছে। তঁহার নাম জনসাধারণের নিকট বিস্তৃতভাবে পরিচিত না হইতে পারে, কিন্তু আমার স্থির বিশ্বাস যে তঁহার মৃত্যুতে যে ক্ষতি হইল তােহা শুধু তাহার আত্মীয় এবং বন্ধুবান্ধবের মধ্যেই আবদ্ধ নহে। বিশ্বমানবের প্রতি ভালোবাসা তাহার কাছে যেরূপ সীতাকার সামগ্ৰী ছিল, সেবার আদর্শকে তিনি তঁহার স্বভাবের সহিত যেরূপ পূর্ণভাবে মিলাইতে পারিয়াছিলেন, খুব কম লোকেরই ভিতর আমরা তাহা দেখিয়াছি। যে-সকল অজ্ঞাত অখ্যাতনামা লোকের মধ্যে প্রতিবেশীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করিবার মতেও কোনাে বিশেষত্ব ছিল না, সম্পূর্ণ বিশ্বাসের সহিত স্বতঃপ্রবৃত্ত হইয়া তিনি তাঁহাদের নিজের সংখ্যা দান কবিতে সর্বদাই প্ৰস্তুত ছিলেন, এবং এই দানের মধ্যে জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে অহংকার রিপুর সংকর্ম-সাধনজনিত আত্মতৃপ্তিগত ভাববিলাসের কিছুমাত্র প্রভাব ছিল না। দুঃস্থ অভাবগ্ৰস্ত লোককে তিনি নিতানিয়ত যে-সাহায্য করিতেন তাহার জন্য তাহার সর্বসাধারণের প্রশংসা দ্বারা পুরস্কৃত হইবার কোনাে সম্ভাবনা ছিল না, তঁহার কাছে নিজের দৈনিককৃত্যের মতোই তাহ নিতান্ত সহজ এবং প্রচ্ছন্ন ছিল। তঁহার দেশপ্রেম ছিল সর্বমানবের দেশের প্রতি, পৃথিবীর যে-কোনো দেশের লোকের উপর কিছুমাত্র অবিচার বা নিষ্ঠুর আচরণ ঘটিলে তিনি অস্তরের সহিত বেদনা অনুভব করিতেন, এবং মহৎভাবে অনুপ্রাণিত হইয়া তাহাদের সাহায্যে প্রবৃত্ত হওয়ার জন্য তিনি নিভীকচিত্তে আপন দেশবাসীর নিকট শাস্তি বরণ করিয়া লইয়াছেন। শান্তিনিকেতন আশ্রমকে তিনি আপন আবাসভূমি বলিয়া জানিয়াছিলেন, তিনি অনুভব করিয়াছিলেন যে, এইখানেই তিনি তঁাহার বিশ্বমানবের প্রতি সেবার আদর্শকে উপলব্ধি করিতে পরিবেন, এবং যে-ভারতের কল্যাণের সহিত র্তাহার জীবনের সকল আশা জড়িত ছিল, তাহার প্রতিও নিজের সুগভীর ভালোবাসা প্রকাশ করিবার সুযোগ পাইবেন। আমি জানি এ দেশে এবং ভারতবর্ষের বাহিরে তঁহার এমন অনেক বন্ধু আছেন যাহারা তাহার মহৎ নিঃস্বর্থ হৃদয়ের প্রতি শ্রদ্ধা অনুভব করেন, এবং তাঁহার এমন অনেক বন্ধু আছেন যাহারা তঁহার মৃত্যুসংবাদে মর্মাহত হইয়াছেন। আমার মনে দৃঢ় ধারণা যে তাহার এই প্রিয় আশ্রমে তঁহার নামে একটি স্থায়ী স্মৃতিচিহ্ন নির্মাণ করিবার ইচ্ছাকে সকলেই অনুমােদন করবেন। আমাদের আশ্রম-সংক্রান্ত হাসপাতালটি যাহাতে নূতন করিয়া তৈরি হয়, এবং যথাবশ্যক সাজসরঞ্জাম সংগ্রহের পর উত্তমরূপে চালিত হয়, ইহাই তাহার একান্ত বাসনা ছিল, এবং বরাবরই তিনি এইজনা সচেষ্ট ছিলেন এবং যথাসম্ভব অর্থদান করিয়াছেন। আমার বিশ্বাস, আমরা যদি তাহার এই ইচ্ছাকে কার্যে পরিণত করিতে পারি, এবং ছেলেদের জন্য স্বতন্তু বিভাগের ব্যবস্থা রাখিয়া একটি ভালোরকম হাসপাতাল নির্মাণ করি, তাহা হইলে তাহার স্মৃতিকে যথার্থ সম্মান করা হইবে, এবং মানবের দুঃখকষ্টে তিনি যে সমবেদনা অনুভব করিতেন তাহার আদর্শ এই হাসপাতাল আমাদের সর্বদা মনে করাইয়া দিবে। এই অভিপ্ৰায়ে আমরা তঁহার বন্ধুবান্ধব এবং