পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ঊনবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

外園●5獲 &br☾ একদও চোখের আড়াল হইতে দেয় না ; পাছে ফাকি দিয়া পালায় এই ভয়ে তাহাকে জড়াইয়া থাকে, এমন-কি, ঘুমাইয়া পড়িলেও আঁচলটি ছাড়ে না । সমস্ত দিন এমনি ভাবে কাটিলে সন্ধ্যার পর জয়গোপাল আসিয়া বলিল, “শহরে ডাক্তারবাবুকে পাওয়া গেল না, তিনি দূরে কোথায় রোগী দেখিতে গিয়াছেন।” ইহাও বলিল, “মকদ্দমা-উপলক্ষে আমাকে আজই অন্যত্র যাইতে হইতেছে ; আমি মতিলালকে বলিয়া গেলাম, সে নিয়মিত আসিয়া রোগী দেখিয়া যাইবে।” রাত্রে নীলমণি ঘুমের ঘোরে প্রলাপ বকিল। প্রাতঃকালেই শশী কিছুমাত্র বিচার না করিয়া রোগী ভ্রাতাকে লইয়া নৌকা চড়িয়া একেবারে শহরে গিয়া ডাক্তারের বাড়ি উপস্থিত হইল। ডাক্তার বাড়িতেই আছেন, শহর ছাড়িয়া কোথাও যান নাই। ভদ্রস্ত্রীলোক দেখিয়া তিনি তাড়াতাড়ি বাসা ঠিক করিয়া একটি প্রাচীন বিধবার তত্ত্বাবধানে শশীকে প্রতিষ্ঠিত করিয়া দিলেন এবং ছেলেটির চিকিৎসা আরম্ভ করিলেন । পরদিনই জয়গোপাল আসিয়া উপস্থিত। ক্রোধে অগ্নিমূতি হইয়া স্ত্রীকে তৎক্ষণাৎ তাহার সহিত ফিরিতে অনুমতি করিল। স্ত্রী কহিল, “আমাকে যদি কাটিয়া ফেল তবু আমি এখন ফিরিব না ; তোমরা আমার নীলমণিকে মারিয়া ফেলিতে চাও ; উহার মা নাই, বাপ নাই, আমি ছাড়া উহার আর কেহ নাই, আমি উহাকে রক্ষা করিব।” জয়গোপাল রাগিয়া কহিল, “তবে এইখানেই থাকে, তুমি আর আমার ঘরে ফিরিয়ো না ।” শশী তখন প্রদীপ্ত হইয়া উঠিয়া কহিল, “ম্বর তোমার কী ! আমার ভাইয়েরই তো ঘর ।” জয়গোপাল কহিল, “আচ্ছা, সে দেখা যাইবে ।” পাড়ার লোকে এই ঘটনায় কিছুদিন খুব আন্দোলন করিতে লাগিল। প্রতিবেশিনী তারা কহিল, “স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া করিতে হয় ঘরে বসিয়া কর-না, বাপু ; ঘর ছাড়িয়া যাইবার আবশ্যক কী। হাজার হউক, স্বামী তো বটে।” সঙ্গে যাহা টাকা ছিল সমস্ত খরচ করিয়া, গহনাপত্র বেচিয়া শশী তাহার ভাইকে মৃত্যুমুখ হইতে রক্ষা করিল। তখন সে খবর পাইল, দ্বারিগ্রামে তাহদের ষে বড়ো জোত ছিল, যে জোতের উপরে তাহদের বাড়ি, নানারূপে যাহার আয় প্রায় বাধিক দেড়হাজার টাকা হইবে, সেই জোতটি জমিদারের সহিত যোগ করিয়া জয়গোপাল নিজের নামে খারিজ করিয়া লইয়াছে। এখন বিষয়টি সমস্তই তাহদের, তাহার ভাইয়ের নহে। ব্যামো হইতে সারিয়া উঠিয়া নীলমণি করুণস্বরে বলিতে লাগিল, “দিদি, বাড়ি