পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ঊনবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যাত্ৰী । 8SVO আমাদের দেশে তীর্থযাত্রা ধর্মসাধনার একটি প্রধান অঙ্গ। দেবতাকে যখন অভ্যাসের পর্দায় ঘিরে রাখে তখন আমরা সেই পর্দাকেই পূজা করি। যাদের মন স্বভাবতই বিষয়ী, ধৰ্মচর্চাতেও যারা বস্তুকে বেশি দাম দেয়, তারা দেবতার চেয়ে পর্দাকেই বেশি শ্রদ্ধা করে। তীর্থযাত্রায় সেই পর্দা ঠেলে দিয়ে মন পথে বেরিয়ে পড়ে। তখন প্রতিদিনের সীমাবদ্ধ জানাকে চিরদিনের অসীম অজানার সঙ্গে মিলিয়ে দেখা সহজ হয়। প্রতিদিন ও চিরদিনের সংগমস্থলেই সত্যের মন্দির। 顧 এবারে তাই পথের দুই পাশে চাইতে চাইতে বেরিয়েছিলুম। অভ্যাসের জগতে যাকে দেখেও দেখি নে, মন জেগে উঠে বললে, সেই চির-অপরিচিত হয়তো কোথায় অজানা ফুলের মালা প’রে অজানা তারার রাত্রে দেখা দেবে। অভ্যাস বলে ওঠে, “সে নেই গো নেই, সে মরীচিকা ।” গণ্ডীর বাইরেকার বিশ্ব বলে, “আছে বইকি, তাকিয়ে দেখো । দেখা হয়ে চুকেছে মনে ক’রে দেথা বদ্ধ কর, তাই তো দেখা হয় না।” তখন ক্ষণে ক্ষণে মনে হয়, "দেখা হল বুঝি।” পথিকের প্রাণের উদবোধন সেই কী-জানি । সেই কী-জানির উদ্দেশে গান লিখেছি। জীবনের সকল নৈরাপ্ত, সকল বিড়ম্বন, সকল তুচ্ছতার অবসাদ অতিক্রম করেও সেই কী-জানির আভাস আলোতে-ছায়াতে ঝলমল করে উঠছে, পথিক তারই চমক নেবার জন্তে তার জানা ঘরের কোণ ফেলে পথে বেরিয়েছে। ক্রাকোভিয়া জাহাজ ১১ই ফেব্রুয়ারি ১৯২৫ বৈষ্ণবী আমাকে বলেছিল, “কার বাড়িতে বৈরাগীর কখন অন্ন জোটে তার ঠিকানা নেই ; সে-অন্নে নিজের জোর দাবি থাটে না, তাই তো বুঝি এ অল্প তিনিই জুগিয়ে দিলেন।” এই কথাই কাল বলেছিলেম, বাধা পাওয়ায় পাওয়ার সত্য মান হয়ে যায়। না-পাওয়ার রসটা তাকে ঘিরে থাকে না । ভোগের মধ্যে কেবলমাত্রই পাওয়া, পশুর পাওয়া ; আর সম্ভোগের মধ্যে পাওয়া না-পাওয়া দুই-ই মিলেছে, সে হল মানুষের। ছেলেবেলা হতেই বিষ্কার পাকা বাসা থেকে বিধাতা আমাকে পথে বের করে দিয়েছেন। অকিঞ্চন বৈরাগীর মতো অস্তরের রাস্তায় একা চলতে চলতে মনের অক্স যখন-তখন হঠাৎ পেয়েছি। আপন-মনে কেবলই কথা বলে গেছি, সেই হল লক্ষ্মীছাড়ার চাল। বলতে বলতে এমন কিছু শুনতে পাওয়া যায় ষা পূর্বে শুনি নি। বলার লোতে যখন জোয়ার আসে তখন কোন গুহার ভিতরকার অজানা সামগ্ৰী ভেসে