পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ঊনবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যাত্রী 8ఆ\రి তার এতটুকুমাত্র বুদ্ধাঙ্গুষ্ঠ তুলে বললে, “মরি তো মরব!” এই হল জাত-বিদ্রোহীদের উপযুক্ত কথা। জাত-বিদ্রোহীরাই চিরদিন জিতে এসেছে। একেবারে গোড়া থেকেই প্রকৃতির শাসনতন্ত্রের বিরুদ্ধে মানুষ নানা ভাবেই বিদ্রোহ ঘোষণা করে দিলে । আজ পর্যস্ত তাই চলছে। মাহুষদের মধ্যে যারা ষত খাটি বিদ্রোহী, যারা বাহ শাসনের সীমাগণ্ডি যতই মানতে চায় না, তাদের অধিকার ততই বেড়ে চলতে থাকে। যেদিন সাড়ে তিনহাত মানুষ স্পর্ধ করে বললে “এই সমুদ্রের পিঠে চড়ব” সেদিন দেবতার হাসলেন না ; তারা এই বিদ্রোহীর কানে জয়মন্ত্ৰ পড়িয়ে দিয়ে অপেক্ষা করে রইলেন। সমূত্রের পিঠ আজ আয়ত্ত হয়েছে, সমূত্রের তলটাকেও কায়দা করা শুরু হল। সাধনার পথে ভয় বারবার ব্যঙ্গ করে উঠছে ; বিদ্রোহীর অন্তরের মধ্যে উত্তরসাধক অবিচলিত বসে প্রহরে প্রহরে হাক দিচ্ছে, “মা ভৈঃ * কালকের চিঠিতে ক্ৰন্দসীর কথা বলেছি, অন্তরীক্ষে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠছে সত্তার ক্ৰন্দন গ্রহে নক্ষত্রে। এই সত্তা বিদ্রোহী, অসীম অব্যক্তের সঙ্গে তার নিরস্তর লড়াই। বিরাট অপ্রকাশের তুলনায় সে অতি সামান্ত, কিন্তু অন্ধকারের অন্তহীন পারাবারের উপর দিয়ে ছোটো ছোটো কোটি কোটি আলোর তরী সে ভাসিয়ে দিয়েছে— দেশকালের বুক চিরে অতলম্পর্শের উপর দিয়ে তার অভিযান। কিছু ডুবছে, কিছু ভাসছে, তবু যাত্রার শেষ নেই। প্রাণ তার বিদ্রোহের ধ্বজ নিয়ে পৃথিবীতে অতি দুর্বলরুপে একদিন দেখা দিয়েছিল। অতি প্রকাগু, অতি কঠিন, অতি গুরুভার অপ্রাণ চারি দিকে গদা উদ্যত করে দাড়িয়ে, আপন খুলোর কয়েদখানায় তাকে দ্বার জানলা বন্ধ করে প্রচণ্ড শাসনে রাখতে চায়। কিন্তু, বিদ্রোহী প্রাণ কিছুতেই দমে না ; দেয়ালে দেয়ালে কত জায়গায় কত ফুটোই করছে তার সংখ্যা নেই, কেবলই আলোর পথ নানা দিক দিয়েই খুলে দিচ্ছে। সত্তার এই বিদ্রোহমক্সের সাধনায় মানুষ যতদূর এগিয়েছে এমন আর-কোনো জীব না। মানুষের মধ্যে যার বিদ্রোহশক্তি যত প্রবল, যত দুর্দমনীয়, ইতিহাসকে ততই সে যুগ হতে যুগান্তরে অধিকার করছে, শুধু সত্তার ব্যাপ্তি দ্বারা নয়, সত্তার ঐশ্বৰ্ষ দ্বারা। এই বিক্রোহের সাধন দুঃখের সাধনা ; দুঃখই হচ্ছে হাতি, দুঃখই হচ্ছে সমুদ্র । বীর্ষের দ্বপে এর পিঠে যারা চড়ল তারাই বাচল ; ভয়ে অভিভূত হয়ে এর তলায় যারা পড়েছে তারা মরেছে। আর, যারা একে এড়িয়ে শস্তায় ফল লাভ করতে চায় তারা মকল ফলের ছদ্মবেশে ফকির বোঝার ভারে মাথা হেঁট করে বেড়ায় । আমাদের ঘরের কাছে সেই জাতের মানুষ অনেক দেখা যায়। বীরত্বের ছাকডাক করতে তারা শিখেছে, কিন্তু সেটা যথাসম্ভব নিরাপদে করতে চায়। যখন মার আসে তখন নালিশ করে বলে,