গল্পগুচ্ছ । ૨( જે ইচ্ছা হয় তো ফিরিয়া আসিবে। বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ গোমস্ত আসিয়া কহিল, চুপ করিয়া থাকিলে কী হইবে, কত্ৰীবধুর খবর লওয়া চাই তো । এই বলিয়া মণিমালিকার পিত্রালয়ে লোক পাঠাইরা দিল । সেখান হইতে খবর আসিল, মণি অথবা মধু এ পর্যন্ত সেখানে পৌছে নাই । তখন চারি দিকে খোজ পড়িয়া গেল । নদীতীরে-তীরে প্রশ্ন করিতে করিতে লোক ছুটিল। মধুর তল্লাস করিতে পুলিলে খবর দেওয়া হইল— কোন নৌক, নৌকার মাঝি কে, কোন পথে তাহারা কোথায় চলিয়া গেল, তাহার কোনো সন্ধান মিলিল না । 謝 সর্বপ্রকার অাশা ছাড়িয়া দিয়া একদিন ফণিভূষণ সন্ধ্যাকালে তাহার পরিত্যক্ত শয়নগৃহের মধ্যে প্রবেশ করিল। সেদিন জন্মাষ্টমী, সকাল হইতে অবিশ্রাস্ত বৃষ্টি পড়িতেছে। উৎসব উপলক্ষে গ্রামের প্রাস্তরে একটা মেলা বসে, সেখানে আটচালার মধ্যে বারোয়ারির যাত্রা আরম্ভ হইয়াছে। মুষলধারায় বৃষ্টিপাতশব্দে যাত্রার গানের স্বর মৃদুতর হইয়া কানে আসিয়া প্রবেশ করিতেছে । ঐ-যে বাতায়নের উপরে শিথিলকজা দরজাটা ঝুলিয়া পড়িয়াছে ঐখানে ফণিভূষণ অন্ধকারে একলা বলিয়াছিল— বাদলার হাওয়া বৃষ্টির ছাট এবং যাত্রার গান ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিতেছিল, কোনো খেয়ালই ছিল না। ঘরের দেওয়ালে আটু স্টুডিয়ো-রচিত লক্ষ্মীসরস্বতীর একজোড়া ছবি টাঙানো ; আলনার উপরে একটি গামছা ও তোয়ালে, একটি চুড়িপেড়ে ও একটি ভুরে শাড়ি সদ্যব্যবহারযোগ্যভাবে পাকানো ঝুলানো রহিয়াছে। ঘরের কোণে টিপাইয়ের উপরে পিতলের ডিবায় মণিমালিকার স্বহস্তরচিত গুটিকতক পান শুষ্ক হইয়া পড়িয়া আছে। কাচের আলমারির মধ্যে তাহার আবাল্যসঞ্চিত চীনের পুতুল, এসেন্সের শিশি, রঙিন কাচের ডিক্যান্টার, শৌখিন তাল, সমুজের বড়ো বড়ো কড়ি, এমন-কি শূন্ত সাবানের বাক্সগুলি পর্যন্ত অতি পরিপাটি করিয়া সাজানো ; ষে অতিক্ষুদ্র গোলকবিশিষ্ট ছোটো শখের কেরোসিন-ল্যাম্প সে নিজে প্রতিদিন প্রস্তুত করিয়া স্বহস্তে জালাইয়া কুলুঙ্গিটির উপর রাখিয়া দিত তাহা যথাস্থানে নির্বাপিত এবং মান হইয়া দাড়াইয়া আছে, কেবল সেই ক্ষুত্র ল্যাম্পটি এই শয়নকক্ষে মণিমালিকার শেষমূহুর্তের নিক্ষত্তর সাক্ষী , সমস্ত শূন্ত করিয়া ষে চলিয়া যায়, সেও এত চিহ্ন, এত ইতিহাস, সমস্ত জড়সামগ্রীর উপর আপন সজীব হৃদয়ের এত স্নেহস্বাক্ষর রাখিয়া যায় ! এলো মণিমালিকা, এলো, তোমার দ্বীপটি তুমি জালাও, তোমার ঘরটি তুমি আলো করে, আয়নার সম্মুখে দাড়াইয়া তোমার স্বত্নকুঞ্চিত শাড়িটি তুমি পরে, তোমার জিনিসগুলি তোমার জন্ত অপেক্ষা করিতেছে । তোমার কাছ হইতে কেহ