চিঠিপত্র জে. ডি. এণ্ডাসনকে লিখিত • আপনি বলিয়াছেন, আমাদের উচ্চারণের বোকটা বাক্যের আরম্ভে পড়ে । ইহা আমি অনেক দিন পূর্বে লক্ষ্য করিয়াছি। ইংরাজিতে প্রত্যেক শব্দেরই একটি নিজস্ব বোক আছে। সেই বিচিত্র ঝোকগুলিকে নিপুণভাবে ব্যবহার করার দ্বারাই আপনাদের ছন্দ সংগীতে মুখরিত হইয়া উঠে । সংস্কৃত ভাষার বোক নাই কিন্তু দীর্ঘত্বস্বস্বর ও যুক্তব্যঞ্জনবর্ণের মাত্রাবৈচিত্র্য আছে, তাহাতে সংস্কৃত ছন্দ ঢেউ খেলাইয়া উঠে। যথা— অস্তু্যত্তরস্তাং দিশি দেবতাত্মা । উক্ত বাক্যের যেখানে যেখানে যুক্তব্যঞ্জনবর্ণ বা দীর্ঘস্বর আছে সেখানেই ধ্বনি গিয়া বাধা পায়। সেই বাধার আঘাতে আঘাতে ছন্দ হিল্লোলিত হইয়া উঠে । যে ভাষায় এইরূপ প্রত্যেক শব্দের একটি বিশেষ বেগ আছে সে ভাষার মস্ত সুবিধা এই যে, প্রত্যেক শব্দটিই নিজেকে জানান দিয়া যায়, কেহই পাশ কাটাইয়া আমাদের মনোযোগ এড়াইয়া যাইতে পারে না । এইজন্ত যখন একটা বাক্য ( sentence) আমাদের সম্মুখে উপস্থিত হয় তখন তাহার উচ্চনীচতার বৈচিত্র্যবশত একটা সুস্পষ্ট চেহারা দেখিতে পাওয়া যায়। বাংলা বাক্যের অস্ববিধা এই ষে, একটা বোকের টানে একসঙ্গে অনেকগুলা শব্দ অনায়ালে আমাদের কালের উপর দিয়া পিছলাইয়া চলিয়া যায় ; তাহীদের প্রত্যেকটার সঙ্গে স্বম্পষ্ট পরিচয়ের সময় পাওয়া যায় না। ঠিক যেন আমাদের একান্নবর্তী পরিবারের মতো। বাড়ির কর্তাটিকেই স্পষ্ট করিয়া অনুভব করা যায় কিন্তু তাহার পশ্চাতে তাহার কত পোন্ত আছে, তাহারা আছে কি নাই, তাহার হিসাব রাখিবার দরকার হয় না। এইজন্য দেখা যায়, আমাদের দেশে কথকতা যদিচ জনসাধারণকে শিক্ষা এবং আমোদ দিবার জন্ত, তথাপি কথকমহাশয় ক্ষণে ক্ষণে তাহার মধ্যে ঘনঘটাচ্ছন্ন সংস্কৃত সমাসের আমদানি করিয়া থাকেন । সে-সকল শব্দ গ্রাম্যলোকেরা বোঝে না, কিন্তু এই-সমস্ত গভীর শব্দের আওয়াজে তাহাদের মনটা ভালো করিয়া ($ ১ সবুজ পত্রে প্রকাশিত সাধু ভাষায় লিখিত মূল পাঠ।