পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বদেশ 8 ** ধায় না, এমন অবস্থায় ব্রাহ্মণ্যের গণ্ডির মধ্যে বদ্ধ থাকার কোনো সুবিধ। কিম্বী সার্থকতা দেখতে পাই নে । কিন্তু সম্প্রতি এমনি হয়ে দাড়িয়েছে যে, ব্রাহ্মণধর্ম যে কেবল ব্রাহ্মণকেই বদ্ধ করেছে তা নয়। শূত্র, শাস্ত্রের বন্ধন র্যাদের কাছে কোনো কালেই দৃঢ় ছিল না তারাও, কোনোএক অবসরে পূর্বোক্ত গণ্ডির মধ্যে প্রবেশ করে বসে আছেন ; এখন আর কিছুতেই স্থান ছাড়তে চান না । পূর্বকালে ব্রাহ্মণের শুদ্ধমাত্র জ্ঞান ও ধর্মের অধিকার গ্রহণ করাতে স্বভাবতই শূত্রের প্রতি সমাজের বিবিধ ক্ষুদ্র কাজের ভার ছিল, স্বতরাং তাদের উপর থেকে আচারবিচার মন্ত্রতন্ত্রের সহস্ৰ বন্ধনপাশ প্রত্যাহরণ করে নিয়ে তাদের গতিবিধি অনেকটা অব্যাহত রাখা হয়েছিল। এখন ভারতব্যাপী একটা প্রকাও নৃতাতন্তুজালের মধ্যে ব্রাহ্মণ শূত্র সকলেই হস্তপদবন্ধ হয়ে মৃতবং নিশ্চল পড়ে আছেন। না তারা পৃথিবীর কাজ করছেন, না পারমার্থিক যোগসাধন করছেন। পূর্বে যে-সকল কাজ ছিল তাও বন্ধ হয়ে গেছে, সম্প্রতি যে কাজ আবশ্যক হয়ে পড়েছে তাকেও পদে পদে বাধা দেওয়া হচ্ছে । অতএব বোঝা উচিত, এখন আমরা যে সংসারের মধ্যে সহসা এসে পড়েছি এখানে প্রাণ এবং মান রক্ষা করতে হলে সর্বদা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আচারবিচার নিয়ে খুত খুত করে বসনের অগ্রভাগটি তুলে ধীরে, নাসিকার অগ্রভাগটুকু কুঞ্চিত ক’রে, একান্ত সস্তপণে পৃথিবীতে চলে বেড়ালে চলবে না— যেন এই বিশাল বিশ্বসংসার একটা পঙ্ককুগু, শ্রাবণ মাসের র্কাচ রাস্তা, পবিত্র ব্যক্তির কমলচরণতলের অযোগ্য। এখন যদি প্রতিষ্ঠা চাও তো চিত্তের উদার প্রসার, সর্বাঙ্গীণ নিরাময় স্বস্থ-ভাব, শরীর ও বুদ্ধির বলিষ্ঠতা, জ্ঞানের বিস্তার এবং বিশ্রামহীন তৎপরতা চাই । সাধারণ পৃথিবীর স্পর্শ সম্বত্বে পরিহার করে, মহামান্য আপনাটিকে সর্বদা ধুয়েমেজে ঢেকেঢুকে, অন্ত সমস্তকে ইতর আখ্যা দিয়ে ঘৃণা করে আমরা যে-রকম ভাবে চলেছিলুম তাকে আধ্যাত্মিক বাবুয়ানা বলে— এই-রকম অতিবিলাসিতায় মনুষ্যত্ব ক্রমে অকৰ্মণ্য ও বন্ধ্য হয়ে আসে । জড়পদার্থকেই কাচের আবরণের মধ্যে ঢেকে রাখা যায়। জীবকেও যদি অত্যন্ত পরিষ্কার রাখবার জন্য নির্মল স্ফটিক-আচ্ছাদনের মধ্যে রাখা যায় তা হলে ধূলি রোধ করা হয় বটে, কিন্তু সেইসঙ্গে স্বাস্থ্যও রোধ করা হয়, মলিনতা এবং জীবন দুটোকেই যথাসম্ভব হ্রাস করে দেওয়া হয় । আমাদের পণ্ডিতেরা বলে থাকেন, আমরা যে একটি আশ্চর্য আর্য-পবিত্রত লাভ