পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(ሎ 8br রবীন্দ্র-রচনাবলী এর মধ্যে প্ৰায় প্রত্যেক যতিতে ফাক আছে । R Nò VO 8 হারিয়ে ফেলা- । বাশি আমা-র। পালিয়েছিল । বুঝি- । s লুকোচুরি-র । ছলে- । কিছু বৈচিত্ৰ্যও দেখছি। প্রথম দুটি বিভাগে সমান্তরাল ফাঁক । কিন্তু তিনের ভাগে ফাক বাদ গিয়ে একেবারে চতুর্থ ভাগের শেষে দীর্ঘ ফাক পড়েছে। পাঠক "হারিয়ে ফেলার পরেও ফাক না দিয়ে একেবারে দ্বিতীয় ভাগের শেষে যদি সেটা পূরণ করে দেন তবে ভালোই শুনতে হবে । কিন্তু যদি বেফাক ঠাসবুনানির বিশেষ ফরমাস থাকে তা হলে সেটাও চেষ্টা করলে মন্দ হবে না। স্বপ্ন আমার বন্ধনহীন সন্ধাতারার সঙ্গী মরণ যাত্রীদলে, স্বর্ণবরণ কুন্তুটিকায় অস্তশিখর লক্তিম লুকায় মীেনতলে । এই কথাটা লক্ষ্য করবার বিষয় যে, হসন্তবর্ণের হ্রস্ব বা দীর্ঘ যে মাত্রাই থাক পাঠ করতে বাঙালি পাঠকের একটুও বাধে না, ছন্দের ঝোক আপনিই অবিলম্বে তাকে ঠিকমত চালনা করে । পাৎলা করিয়া কাটো কাৎলা মাছেরে, উৎসুক নাৎনি যে চাহিয়া আছে রে । এই ছড়াটা পড়তে গেলে বাঙালি নিঃসংশয়ে স্বতই খণ্ড ৎ-এর পূর্ববতী স্বরবর্ণকে দীর্ঘ করে পড়বে | আবার যেমনি নিম্নের ছড়াটি সামনে ধরা পাৎলা করি কাটো, প্ৰিয়ে, কাৎলা মাছটিরে, টাটকা তেলে ফেলে দাও সরষে। আর জিরে, ভেটকি যদি জোটে তাহে মাখো লঙ্কাবাটা, যত্ন করে বেছে ফেলো টুকরো যত কাটা অমনি প্ৰাক-হসন্ত স্বরগুলিকে ঠেসে দিতে এক মূহুৰ্তও দেরি হবে না । এই যে বাংলা স্বরবর্ণের সজীবতা, একে কোনো কড়া নিয়মের চাপে আড়ষ্ট করে তাকে সর্বত্র সমানভাবে ব্যবহারযোগ্য করা উচিত- এ মত চালালে বাংলা ভাষাকে ফাকি দেওয়া হবে । শুকনো আমসত্ত্বের মধ্যেই সাম্য, কিন্তু সরস আমের মধ্যে বৈচিত্র, ভোজে কোনটার দাম বেশি তা নিয়ে তর্ক অনাবশ্যক । বাংলা প্ৰাকৃত ভাষার কাব্যে স্বরধ্বনির যে প্ৰাণবান স্বচ্ছন্দতা আছে সংস্কৃত বাংলা ভাষা, যাকে আমরা সাধুভাষা বলি, তার মধ্যে পড়ে সে কেন জেনানা মেয়ের মতো দেয়ালে আটকা পড়ে গেল । তার কারণ, সংস্কৃত-বাংলা কৃত্রিম ভাষা, ওখানে বাইরের নিয়মের প্রাধান্য, তার আপনি নিয়ম অনেক' জায়গায় কুষ্ঠিত । সভাস্থলে একটি আসনে একটি মানুষের স্থান নির্দিষ্ট ; কারও বা দেহ ক্ষীণ, আসনে ফাক থেকে যায় ; কারও বা স্কুল দেহ, আসনে ঠেসে বসতে হয় ; কিন্তু গোনাগনিতি চৌকি, সীমা নির্দিষ্ট । যদি ফরাশে বসতে হত তা হলে কলেবারের তারতম্য ধরে মর্যাদার আসনের সীমানায় কমিবেশি স্বাভাবিক নিয়মেই ঘাটত । কিন্তু সভ্যতার মর্যাদার দিকে দৃষ্টি রেখে স্বভাবের নিয়মকে বাধানিয়মে পাকা করে দিতে হয় । তাতে কিছু পীড়ন ঘটলেও গাষ্ঠীর্যের পক্ষে তার একটা সার্থকতা আছে । সেইজন্যেই সভার রীতি ও ঘরের রীতিতে কিছু ভেদ থাকেই । শকুন্তলার বাকল দেখে দুষ্যন্ত বলেছিলেন : কিমিব হি মধুরাণাং মণ্ডনং নাকৃতী নাম । কিন্তু যখন তাকে রাজান্তঃপুরে নিয়েছিলেন তখন তাকে নিশ্চয়ই বাকল পরান নি। তখন শকুন্তলার স্বাভাবিক শোভাকে অলংকৃত করেছিলেন, সৌন্দর্যবৃদ্ধির জন্যে নয়, মর্যাদারীক্ষার জন্যে । রাজরানীর সৌন্দর্য ব্যক্তিবিশেষে বিচিত্র, কিন্তু ঠার