পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৩৮ রবীন্দ্র-রচনাবলী করিতেছে এবং দারুকেশ্বর হাত ধরিয়া তাহাকে টানাটানি করিয়া রাখিবার চেষ্টা করিতেছে। অক্ষয়ের অবর্তমানে মৃত্যুঞ্জয় অগ্রপশ্চাৎ বিবেচনা করিয়া সম্বন্ত হইয়া উঠিয়াছে। অক্ষয় ঘরে প্রবেশ করিবামাত্র মৃত্যুঞ্জয় রাগের স্বরে বলিয়া উঠিল, “না মশায়, আমি ক্রিস্টান হতে পারব না, আমার বিয়ে করে কাজ নেই।” অক্ষয় কহিলেন, “তা, মশায়, আপনাকে কে পায়ে ধরাধরি করছে ।” দারুকেশ্বর কহিল, “আমি রাজি আছি মশায় ।” অক্ষয় কহিলেন, “রাজি থাকেন তো গির্জায় যান না মশায়। আমার সাত পুরুষে ক্রিস্টান করা ব্যাবসা নয় ।” দারুকেশ্বর কহিল, “ওই যে কোন বিশ্বাসের কথা বললেন- “ অক্ষয় । তিনি টেরিটির বাজারে থাকেন, তার ঠিকানা লিখে দিচ্ছি। দারুকেশ্বর । আর বিবাহটা ? অক্ষয় । সেটা এ বংশে নয় । দারুকেশ্বর। তা হলে এতক্ষণ পরিহাস করছিলেন মশায় ? খাওয়াটাও কি-- অক্ষয় । সেটাও এ ঘরে নয় । দারুকেশ্বর । অস্তত হোটেলে— অক্ষয় । সে কথা ভালো।— বলিয়া টাকার ব্যাগ হইতে গুটিকয়েক টাকা বাহির করিয়া দুটিকে বিদায় করিয়া দিলেন। তখন নৃপর হাত ধরিয়া টানিয়া নীরবাল বসন্তকালের দমকা হাওয়ার মতো ঘরের মধ্যে আসিয়া প্রবেশ করিল। কহিল, "মুখুজোমশায়, দিদি তো দুটির কোনোটিকেই বাদ দিতে চান না ।” নৃপ তাহার কপোলে গুটি দুই-তিন অঙ্গুলির আঘাত করিয়া কহিল, “ফের মিথ্যে কথা বলছিস ?” অক্ষয়। ব্যস্ত হসনে ভাই, সত্যমিথ্যের প্রভেদ আমি একটু একটু বুঝতে পারি। নীরবালা । আচ্ছ মুখুজ্যেমশায়, এ দুটি কি রসিকদাদার রসিকতা, না আমাদের সেজদিদিরই ফাড়া ? অক্ষয় । বন্দুকের সকল গুলিই কি লক্ষ্যে গিয়ে লাগে ? প্রজাপতি টার্গেট প্রাকৃটিস করছিলেন, এ দুটো ফসকে গেল। প্রথম প্রথম এমন গোটাকতক হয়েই থাকে। এই হতভাগ্য ধরা পড়বার পূর্বে তোমার দিদির ছিপে অনেক জলচর ঠোকর দিয়ে গিয়েছিল, বড়শি বিধল কেবল আমারই কপালে। * বলিয়৷ কপালে চপেটাঘাত করিলেন ।