সুচনা ভক্ত যখন বলেন, স্বয়া হৃষীকেশ হৃদিস্থিতেন যথা নিযুক্তোহস্মি তথা করোমি, তখন হৃষীকেশের থেকে ভক্ত নিজেকে পৃথক করে দেখেন, সুতরাং তার নিজের জীবনের সমস্ত দায়িত্ব গিয়ে পড়ে এক হৃষিকেশের পরেই। চিত্র কাব্যে আমি একদিন বলেছিলুম আমার অন্তর্যামী অামাকে দিয়ে যা বলাতে চান আমি তাই বলি, কথাটা এই রকম শুনতে হয়। কিন্তু চিত্রায় আমার যে উপলব্ধি প্রকাশ পেয়েছে সেটি অন্য শ্রেণীর। আমার একটি যুগ্মসত্তা আমি অনুভব করেছিলুম যেন যুগ্ম নক্ষত্রের মতে, সে আমারই ব্যক্তিত্বের অন্তর্গত, তারই আকর্ষণ প্রবল । তারই সংকল্প পূর্ণ হচ্ছে আমার মধ্য দিয়ে, আমার মুখে দুঃখে, আমার ভালোয় মন্দয় । এই সংকল্প-সাধনায় এক আমি যন্ত্র এবং দ্বিতীয় আমি যন্ত্রী হতে পারে, কিন্তু সংগীত যা উদ্ভূত হচ্ছে—যন্ত্রেরও স্বকীয় বিশিষ্টত তার একটি প্রধান অঙ্গ। পদে পদে তার সঙ্গে রফা করে তবেই ছয়ের যোগে স্থষ্টি । এ যেন অর্ধনারীশ্বরের মতো ভাবখানা । সেই জন্তেই বলা হয়েছে— জেলেছ কি মোরে প্রদীপ তোমার করিবারে পূজা কোন দেবতার রহস্যঘের অসীম তাধার মহামন্দিরতলে । পরমদেবতার পুজা যুগ্মসত্তায় মিলে, এক সত্তায় ভিতর থেকে আদর্শের প্রেরণা, আর এক সত্তায় বাহিরে কর্মযোগে তার প্রকাশ। সংসারে এই দুই সত্তার বিরোধ সর্বদাই ঘটে, নিজের অস্তরে পূর্ণতার যে অনুশাসন মানুষ গৃঢ়ভাবে বহন করছে তার সম্পূর্ণ প্রতিবাদে জীবন ব্যর্থ হয়েছে এ দৃষ্টাস্তের অভাব নেই। নিজের মধ্যে নিজের সামঞ্জস্ত ঘটতে পারেনি, এই ভ্ৰষ্টতা মানুষের পক্ষে সব চেয়ে শোচনীয়। আপনার স্থই সত্তার সামঞ্জস্য ঘটেছে কি না এই আশঙ্কাসূচক প্রশ্ন চিত্রার কবিতায় অনেক বার প্রকাশ পেয়েছে। বস্তুত চিত্রায় জীবনরঙ্গভূমিতে যে মিলননাট্যের উল্লেখ হয়েছে তার কোনো নায়ক-নায়িকা জীবের সত্তার বাইরে নেই,
পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৯
অবয়ব