পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রজাপতির নির্বন্ধ - ૨૭છે তিনি অস্ত দিনের মতোই নিশ্চিন্ত নির্তরের ভাবে কহিলেন, “এক বার খুজে দেখো তো ফেনি।” নির্মলা কহিল, “তুমি কোথায় কী ফেল আমি কি খুজে বের করতে পারি?” এতক্ষণে চন্দ্রবাবুর স্বভাবনিঃশঙ্ক মনে একটুখানি সন্দেহের সঞ্চার হইল ; স্কিশ্বকণ্ঠে কহিলেন, “তুমিই তো পার নির্মল! আমার সমস্ত ক্রটিসম্বন্ধে এত ধৈৰ্ষ আর কার আছে ?” নির্মলার রুদ্ধ অভিমান চন্দ্রবাবুর স্নেহশ্বরে অকস্মাৎ আশ্রজলে বিগলিত হইবার উপক্রম করিল ; নিঃশব্দে সম্বরণ করিবার চেষ্টা করিতে লাগিল। : তাহাকে নিরুত্তর দেখিয়া চন্দ্রমাধববাবু নির্মলার কাছে আসিলেন এবং যেমন করিয়া সন্দিগ্ধ মোহরটি চোখের খুব কাছে ধরিয়া পরীক্ষা করিতে হয় তেমনি করিয়া নির্মলার মুখখানি দুই আঙল দিয়া তুলিয়া ধরিয়া ক্ষণকাল দেখিলেন এবং গভীর স্বছ হাস্তে কহিলেন, “নির্মল আকাশে একটুখানি মালিন্ত দেখছি যেন! কী হয়েছে বলে দেখি ।” নির্মলা জানিত চন্দ্রমাধববাবু অকুমানের চেষ্টাও করিবেন না। যাহা স্পষ্ট প্রকাশমান নহে তাহা তিনি মনের মধ্যে স্থানও দিতেন না । তাহার নিজের চিত্ত যেমন শেষ পর্যন্ত স্বচ্ছ অন্যের নিকটও সেইরূপ একান্ত স্বচ্ছতা প্রত্যাশা করিতেন । নির্মলা ক্ষুব্ধ স্বরে কহিল,"এত দিন পরে আমাকে তোমাদের চিরকুমার-সভা থেকে বিদায় দিচ্ছ কেন ? আমি কী করেছি ?” চন্দ্রমাধববাৰু আশ্চর্ষ হইয়া কহিলেন, “চিরকুমার-সভা থেকে তোমাকে বিদায় ? তোমার সঙ্গে সে সভার যোগ কী ?” নির্মলা । দরজার আড়ালে থাকলে বুঝি যোগ থাকে না ? অন্তত সেই যতটুকু যোগ তাই বা কেন যাবে ? * চন্দ্রবাবু নিৰ্মল, তুমি তো এ সভার কাজ করবে না— যার কাজ করবে তাদের স্ববিধার প্রতি লক্ষ রেখেই— নির্মলা। আমি কেন কাজ করব না ? তোমার ভাগনে না হয়ে ভায়ী হয়ে জন্মেছি বলেই কি তোমাদের হিতকার্ধে যোগ দিতে পারব না ? তবে আমাকে এত দিন শিক্ষা দিলে কেন ? নিজের হাতে আমার সমস্ত মনপ্রাণ জাগিয়ে দিয়ে শেষকালে কাজের পথ রোধ করে জাও কী বলে ? চজমাধববাৰু এই উচ্ছ্বাসের জন্য কিছুমাত্র প্রভত ছিলেন না তিনি ৰে নিৰ্মলাকে নিজে কী ভাবে গড়িয়া তুলিয়াছিলেন তাহ নিজেই জানিতেন না। ধীরে ধীরে