পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্রন্থপরিচয় । AVy সুযোগে রবীন্দ্রবাবুর প্রস্তাব কার্যে পরিণত হইবে বুঝিয়া পরিষৎ কর্তব্যনিরাপণের পরামর্শ সাহিত্যপরিষৎকে সাহিত্যসম্মিলনে উপস্থিত হইবার জন্য নিমন্ত্ৰণ করিয়া পাঠাইলেন। ১লা ও ২রা বৈশাখ (১৩১৩) বরিশালে বঙ্গের প্রাদেশিক সমিতি (Bengal Provincial Conference) বসিবার কথা ছিল।"- এই সুযোগ বুঝিয়া ওই সময়েই বরিশালবাসীরা সাহিত্যসম্মিলন প্রস্তাব করেন।--- ৩রা বৈশাখ তারিখে এই সম্মিলনের দিন স্থির হয়। বঙ্গীয় সাহিত্যপরিষদের অন্যতম সহকারী সভাপতি শ্ৰীযুক্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকেই সভাপতির আসন দিবার প্রস্তাব হইয়াছিল। এই সাহিত্যসম্মিলনের সহিত রাজনীতির কোনো সম্পর্ক থাকিবে না, ইহাও বিজ্ঞাপিত হইয়াছিল । 疆 বরিশালের এই নিমন্ত্রণ পরিষৎ সাদরে গ্রহণ করেন- তৎপরে যাহা ঘটিয়াছে তাহা ১লা বৈশাখ তারিখে প্রাদেশিক সমিতির সভ্যগণ পুলিসের হস্তে নিগৃহীত হন এবং ২রা বৈশাখ ম্যাজিষ্ট্রেটের আদেশে পুলিস-কর্তৃক প্রাদেশিক সমিতির অধিবেশন ভাঙিয়া দেওয়া হয়। যে মণ্ডপে প্রাদেশিক সমিতি বসিয়াছিল, সেই মণ্ডপেই ৩রা বৈশাখ সাহিত্যসম্মিলন বসিবে এইরূপ নির্ধারিত ছিল । ম্যাজিষ্ট্রেটের আদেশ হইল যে, ওই মণ্ডপে বা বরিশালের অন্যত্র কোনো সভা হইতে পারিবে না. অন্যান্য কার্যের মধ্যে বন্দেমাতরম উচ্চারণ 'গােলমালজনক কার্যের মধ্যে গণ্য হইবে এইরূপ বুঝা গিয়াছিল। বন্দেমাতরম উচ্চারণের সহিত রাজনীতিরই সম্পর্ক হইলেন না।. পরম্পরায় শুনা গিয়াছিল, রাজপুরুষেরা স্থানীয় রাজকর্মচারীদিগকে ও রাজকীয় বিদ্যালয়ের ছাত্রদিগকে সাহিত্যসম্মিলনে উপস্থিত হইতে নিষেধ-আজ্ঞা প্রচার করিয়াছেন। ২রা বৈশাখ সন্ধ্যার পর রবীন্দ্রনাথ স্থানীয় ও নিমন্ত্রিত সাহিত্যসেবীদের সহিত পরামর্শ করিলেন । অতঃপর বরিশালে আর সাহিত্যসম্মিলন হওয়া সম্ভবপর নহে- বহু বিবেচনার পর ইহাই স্থির হইল। বরিশালবাসীরা ক্ষুন্নমনে ও ভগ্নহৃদয়ে সমবেত প্রতিনিধিগণকে বিদায় দিতে বাধ্য হইলেন। এইরূপে সাহিত্য সম্মিলনের প্রথম অভিনয়ে সূত্ৰধার প্রবেশের পূর্বেই যবনিকাপাত --১৩১৩ সালে বহরমপুরে প্রাদেশিক রাজনৈতিক অধিবেশনের সময় সাহিত্যসম্মিলনের পুনরায় উদ্যোগ হইয়াছিল।-- মহারাজ মণীন্দ্রচন্দ্ৰ নদী বাহাদুর এই সম্মিলনের প্রধান উদ্যোগকারী ছিলেন। অকস্মাৎ তাহার পুত্রবিয়ােগে বহরমপুরের অভ্যর্থনা সমিতি ও বঙ্গীয় সাহিত্যপরিষৎ একযোগে সাহিত্যসম্মিলন আপাতত স্থগিত রাখা উচিত বিবেচনা করেন। —বঙ্গীয় সাহিত্যপরিষদের বার্ষিক বিবরণ বঙ্গীয় সাহিত্যসম্মিলনের প্রথম অধিবেশন মুর্শিদাবাদে, ১৩১৪ সালের কার্তিকে । চতুর্দশ বার্ষিক বিবরণ হইতে এই সম্মিলনের কিঞ্চিৎ বিবরণ উদধূত হইল শ্যামাপূজার অব্যবহিত পূর্বে ১৭ই এবং ১৮ই কার্তিক দুই দিনে সম্মিলনের অধিবেশন ধার্য হয় |••• । শ্ৰীযুক্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশয় বঙ্গীয় সাহিত্যসম্মিলনের এই প্রথম অধিবেশনে সভাপতির আসন অলংকৃত করিয়াছিলেন, ইহা সর্বতােভাবে সংগতই হইয়াছিল। রবীন্দ্রবাবুই প্রথমে এইরূপ সাহিত্যসম্মিলনের আবশ্যকতা পরিষদের সম্মুখে উপস্থিত করিয়াছিলেন। তাহারই নেতৃত্বে সাহিত্যসম্মিলন যে সুপথে চালিত হইয়াছে তাহা বলা অনাবশ্যক। -বঙ্গীয় সাহিত্যপরিষদের চতুৰ্দশ বার্ষিক বিবরণ