পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

外两3页 SVOS মহেন্দ্রের নিকট হইতে বার বার অর্থ চাহিতে তাহার কেমন কষ্ট হইত, তদ্ভিন্ন সে জানিত অৰ্থ পাইলেই নরেন্দ্র তাহা দুষ্কর্মে ব্যয় করিবে মাত্র । লাগিল। করুণ কঁদিতে কঁাদিতে কহিল, “পায়ে পড়ি, আমাকে আর চিঠি লিখিতে বলিয়ে না।” সেই সময় সেই দাসীটি আসিয়া পড়িল, সেও নরেন্দ্রের সঙ্গে যোগ দিল— কহিল, “তুমি অমন একওঁয়ে মেয়ে কেন গাঁ ! টাকা না থাকলে গিলবে কী ।” নরেন্দ্র ক্রুদ্ধভাবে কহিল, “লিখিতেই হইবে।” করুণা নরেন্দ্রের পা জড়াইয়া ধরিয়া কহিল, “ক্ষমা করো, আমি লিখিতে পারিব না ।” “লিখিবি না ? হতভাগিনী, লিখিবি না ?” ক্ৰোধে রক্তবর্ণ হইয়া নরেন্দ্র করুণার্কে প্রহার করিতে লাগিল। এমন সময় সহসা দ্বার খুলিয়া পণ্ডিতমহাশয় প্রবেশ করিলেন ; তিনি তাড়াতাড়ি গিয়া নরেন্দ্রকে ছাড়াইয়া দিলেন, দেখিলেন দুর্বল করুণা মুছিত হইয়া পড়িয়াছে। সপ্তবিংশ পরিচ্ছেদ পূর্বেই বলিয়াছি, পণ্ডিতমহাশয় নিধির টানাটানিতে গাড়িতে উঠিলেন বটে, কিন্তু তাহার মন কখনোই ভালো ছিল না । তিনি প্রায়ই মাঝে মাঝে মনে করিতেন, তাহার স্নেহভাগিনী করুণার দশ কী হইল! এইরূপ অনুতাপে যখন কষ্ট পাইতেছিলেন এমন সময়ে দৈবক্রমে মোহিনীর সহিত সত্য-সত্যই তাহার সাক্ষাৎ হয় । তাহার নিকট করুণার সমস্ত সংবাদ পাইয়া আর থাকিতে পারিলেন না, তাড়াতাড়ি কলিকাতায় আসিলেন । প্ৰথমে মহেন্দ্রের কাছে গেলেন, সেখানে নরেন্দ্রের বাড়ির সন্ধান লইলেন— বাড়িতে আসিয়াই নরেন্দ্রের ঐ নিষ্ঠুর অত্যাচার দেখিতে পাইলেন। সেই মূৰ্ছার পর হইতে করুণার বার বার মূৰ্ছা হইতে লাগিল। পণ্ডিতমহাশয় মহা অধীর হইয়া উঠিলেন। তিনি যে কী করবেন কিছুই ভাবিয়া পাইলেন না। এই সময়ে তিনি নিধির অভাব অত্যন্ত অনুভব করিতে লাগিলেন। অনেক ভাবিয়া-চিন্তিয়া তিনি তাড়াতাড়ি মহেন্দ্রকে ডাকিতে গেলেন। মহেন্দ্র ও রজনী উভয়েই আসিল । মহেন্দ্ৰ যথাসাধ্য চিকিৎসা করিতে লাগিলেন । করুণা মাঝে মাঝে রজনীর হাত ধরিয়া অতি ক্ষীণ স্বরে কথা কহিত ; পণ্ডিতমহাশয় যখন অনুতপ্তহৃদয়ে করুণার নিকট আপনাকে ধিককার দিতেন, যখন কাদিতে কঁাদিতে বলিতেন, 'মা, আমি তোকে অনেক কষ্ট দিয়াছি, তখন করুণা অশ্রুপূর্ণনেত্ৰে অতি ধীরস্বরে তঁহাকে বারণ করিত। কেহ যদি জিজ্ঞাসা করিত নরেন্দ্রকে ডাকিয়া দিবে ? সে কহিত, “কাজ নাই ।” সে জানিত নরেন্দ্ৰ কেবল বিরক্ত হইবে মাত্র । আজ রাত্রে করুণার পীড়া বড়ো বাড়িয়াছে। শিয়রে বসিয়া রজনী কঁদিতেছে। আর পণ্ডিতমহাশয় কিছুতেই ঘরের মধ্যে স্থির থাকিতে না পারিয়া বাহিরে গিয়া শিশুর ন্যায় অধীর উচ্ছাসে কীদিতেছেন। নরেন্দ্র গৃহে নাই। আজ করুণা একবার নরেন্দ্রকে ডাকিয়া আনিবার জন্য মহেন্দ্রকে অনুরোধ করিল। নরেন্দ্র যখন গৃহে আসিলেন, তাহার চক্ষু লাল, মুখ ফুলিয়াছে, কেশ ও বস্ত্ৰ বিশৃঙ্খল। হতবুদ্ধিপ্রায় নরেন্দ্রকে করুণার শয্যার পর্থে সকলে বসাইয়া দিল। করুণা কম্পিত হস্তে নরেন্দ্রর হাত ধরিল, কিন্তু কিছু কহিল না। अशिन् ७२५8-छाप १९४१