পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নিবেদন রবীন্দ্র-রচনাবলীর বর্তমান খণ্ডে কবির কৈশোর ও যৌবনের রচনা কয়েকখানি গ্ৰন্থ প্রকাশকালানুক্রমে সজিত হইয়া প্ৰকাশিত হইল। এই খণ্ডের নাম দেওয়া হইয়াছে “আচলিত-সংগ্ৰহ" । এই গ্রন্থগুলি অধিকাংশই পুনরুমুদ্রিত হয় নাই । বর্তমানেও এগুলি আর চলিত ছিল না ; অপরিণত রচনা মনে করিয়া কবি এগুলি বর্জন করিয়াছিলেন, এবং এই “আচলিত” রচনাগুলি আর প্রচলিত না হয়। ইহাই তার অভিপ্ৰায় ছিল । এই গ্রন্থগুলি সম্বন্ধে সুতীব্র বিরাগ তিনি নানা উপলক্ষে প্রকাশ করিয়াছেন, রবীন্দ্র-রচনাবলী-প্রকাশের উদ্যোগকালেও তিনি একটি পত্রে লিখিয়াছেন ‘বিশ্বভারতী-গ্ৰন্থপ্রকাশমণ্ডলী আমার সমগ্র গ্রন্থাবলী প্রকাশ করতে প্ৰবৃত্ত হয়েছেন । সমগ্র গ্রন্থাবলী বলতে বোঝায় অনেকখানি অংশ, যা প্ৰাগৈতিহাসিক । যার সঙ্গে আমার সাহিত্য-ইতিহাসের দূরবতী যোগ আছে, কিন্তু তার চলতি কারবার বন্ধ হয়ে গেছে । অতীতের ঘষে-যাওয়া তামার ফলকে তার বাণী যে অক্ষরে চিহ্নিত, তাকে গুপ্তযুগের লিপি বলা যেতে পারে । সেই লিপির অস্পষ্টতা থেকে অর্থ উদ্ধার করবে বসে বিজ্ঞানী, কিন্তু সৃষ্টিকর্তা তাকে স্বীকার করতে চায় না । কেননা, যে বাণীর শিল্প-আবরণ গেছে। জীৰ্ণ হয়ে, সাহিত্যের দরবারে তার প্রবেশ করবার মতো আৰু নেই । . কবির সকল রচনা প্রকাশ করিতে উৎসুক বন্ধুদের পরিহাস করিয়া কিছুকাল পূর্বে একটি কবিতায় তিনি লিখিয়াছেন বিপদ ঘটাতে শুধু নেই ছাপাখানা, বিদ্যানুরাগী বন্ধু রয়েছে নানা আবর্জনারে বর্জন করি। যদি চারি দিক হতে গর্জন করি উঠে, “ঐতিহাসিক সূত্র দিবে কি টুটে ? যা ঘটেছে তারে রাখা চাই নিরবধি { ইতিহাস বুড়ে বেড়াজাল তার পাতা, সঙ্গে রয়েছে হিসাবের মোটা খাতা ধরা যাহা পড়ে ফর্দো সকলি আছে । হয়। আর নয় খোজ রাখে শুধু এই, ভালো-মন্দর দরদ কিছুই নেই, মূল্যের ভেদ তুল্য তাহার কাছে । সৃষ্টির কাজ লুপ্তির সাথে চলে, ছপা-যন্ত্রের ষড়যন্ত্রের বলে 臀 এ বিধান যদি পদে পদে পায় বাধা জীর্ণ ছিন্ন মলিনের সাথে গোজা কৃপণ-পাড়ার রাশীকৃত নিয়ে বোঝা সাহিত্য হবে শুধু কি ধোবার গাধা !