পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কালাস্তুর ' ९े9 এতদস্মৃতমভয়ং শান্ত উপাসীত— যিনি অমৃত, যিনি অভয় তাকে উপাসনা করে শাস্ত হও । তাদের উপদেশকে আমরা মাথায় লই, এবং মৃত্যু ও সকল ভয়ের অতীত ষেশান্তি সেই শাভিতে প্রতিষ্ঠালাভ করি । R কারো উঠোন চষে দেওয়া আমাদের ভাষায় চূড়ান্ত শাস্তি বলে গণ্য। কেননা উঠোনে মানুষ সেই বৃহৎ সম্পদকে আপন করেছে, যেটাকে বলে ফাক। বাহিরে এই ফাক দুর্লভ নয়, কিন্তু সেই বাহিরের জিনিসকে ভিতরের করে আপনার করে না তুললে তাকে পেয়েও না পাওয়া হয়। উঠোনে ফাকটাকে মানুষ নিজের ঘরের জিনিস করে তোলে ; ঐখানে সূর্যের আলো তার ঘরের আপনার আলো হয়ে দেখা দেয়, ঐখানে তার ঘরের ছেলে আকাশের চাদকে হাততালি দিয়ে ডাকে। কাজেই উঠোনকেও যদি বেকার না রেখে তাকে ফসলের খেত বানিয়ে তোলা যায়, তা হলে যে-বিশ্ব মানুষের অাপন ঘরের বিশ্ব, তারই বাসা ভেঙে দেওয়া হয় । সত্যকার ধনী ও দরিত্রের মধ্যে প্রভেদ এই যে, ধনী এই ফাকটাকে বড়ো করে রাখতে পারে। যে-সমস্ত জিনিসপত্র দিয়ে ধনী আপনার ঘর বোঝাই করে তার দাম খুব বেশি, কিন্তু যে-ফাকটা দিয়ে তার আঙিনা হয় প্রশস্ত, তার বাগান হয় বিস্তীর্ণ সেইটেই হচ্ছে সবচেয়ে দামী। সদাগরের দোকানঘর জিনিসপত্রে ঠাসা ; সেখানে ফাক রাখবার শক্তি তার নেই। দোকানে সদাগর কৃপণ, সেখানে লক্ষপতি হয়েও সে দরিত্র। কিন্তু সেই সদাগরের বাসের বাড়িতে ঘরগুলো লম্বায় চওড়ায় উচুতে সকল দিকেই প্রয়োজনকে ধিক্কার করে ফাকটাকেই বেশি আদর দিয়েছে, আর বাগানের তো কথাই নেই। এইখানেই সদাগর ধনী । শুধু কেবল জায়গার ফাকা নয়, সময়ের ফাকাও বহুমূল্য। ধনী তার অনেক টাকা দিয়ে এই অবকাশ কিনতে পায়। তার ঐশ্বর্যের প্রধান লক্ষণ এই যে, লম্বা লম্বা সময় সে ফেলে রাখতে পারে। হঠাৎ কেউ তার সময়ের উঠোন চযতে পারে না । আরেকটা ফাক, যেটা সবচেয়ে দামী, সে হচ্ছে মনের ফাকা। যা-কিছু নিয়ে মন চিন্তা করতে বাধ্য হয়, কিছুতেই ছাড় পায় না, তাকেই বলে দুশ্চিন্তা । গরিবের চিন্তা, হতভাগার চিন্তা মনকে একেবারে অঁাকড়ে থাকে, অশথগাছের শিকড়গুলো ভাঙা মন্দিরকে যে-রকম অঁাকড়ে ধরে। দুঃখ জিনিসটা আমাদের চৈতম্ভের ফাক বুজিয়ে দেয়। শরীরের স্থস্থ অবস্থা তাকেই বলে যেটা হচ্ছে শারীরচৈতন্তের ফাকা ময়দান। কিন্তু হোক দেখি বা পায়ের কড়ে আঙুলের গাটের প্রান্তে বাতের বেদন,