পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোড়ায় গলদ २०१ পটলডাঙার বাসার মধ্যে পড়ে পড়ে ট্রামের ঘড়ঘড় শুনছি। হথার মধ্যে একটার বেশি রবিবার আসে না, তাও কিসে খরচ করব ভেবে পাওয়া যায় না । চন্দ্রকান্ত । আচ্ছা বর্ষার দিনে যেমন চালকড়াই ভাজা তেমনি রবিবার দিনে কী হলে ঠিক হত বলে দেখি বিনদা । বিনোদবিহারী। তবে সত্যি কথা বলব। র্ত্যা ! একটি রাঙা পাড়, একটু মিষ্টি হাসি, দুটো নরম কথা,— তার থেকে ক্রমে দীর্ঘনিশ্বাস, ক্রমে অশ্রু জল, ক্রমে ছটফটানি— চন্দ্রকান্ত । এমন কি, আত্মহত্যা পর্যস্ত— বিনোদবিহারী । হা— এই হলে জীবনটার একটুখানি স্বাদ পাওয়া যায়। ভাই, ওই কালো চোখ, টুকটুকে ঠোট, মিষ্টিমুখের সঙ্গে মাঝে মাঝে মিশল না হলে এই রোজ রোজ নিরিমিষ দিনগুলো আর তো মুখে রোচে না । কেবল এই শুকনো বইয়ের বোঝা টেনে এই পচিশটা বৎসর কী করে কাটল বলো দেখি । চন্দ্রকান্ত । এর চেয়ে সাধের মানবজন্ম একেবারেই ঘুচিয়ে দিয়ে যদি কোনো গতিকে একটা ইংরেজ নভেলিস্টের মাথার মধ্যে সেধোতে পারা যেত, বেশ দিব্যি সোনার জলে বাধানো একখানি তকতকে বইয়ের মধ্যে ছাপা হয়ে বেরোতুম— কখনো ঈডিথ, কখনো এলেন, কখনো লিওনোরার সঙ্গে বেশ ভালো ইংরিজিতে প্রেমালাপ করছি— মেয়ের বাপ বিয়ে দিতে চাচ্ছে না, মেয়ে সমুদ্রে ঝাপ দিয়ে মরতে চাচ্ছে, শেষকালে নভেলের শেষ পাতায় বেশ স্বথে-স্বচ্ছন্দে দুটিতে মিলে ঘরকরনা করছি— হুহু করে এডিশনের পর এডিশন উঠে যাচ্ছে আর পাচ-পাচ শিলিঙে বিক্রি হচ্ছি। বিনোদবিহারী । চমৎকার! কত মেরি-ফ্যানি-লুসির হাতে হাতে কোলে কোলে দিনপাত করা যাচ্ছে । যে-সব নীল চোখ কোনো জন্মে আমাদের প্রতি কটাক্ষপাতও করত না তারা হুহু শব্দে আমাদের জন্তে অশ্রীবর্ষণ করছে। তা না হয়ে জন্মালুম বাঙালির ঘরে— কেবল একুইটি আর এভিডেন্স অ্যাক্ট মুখস্থ করে করেই দুর্লভ জীবনটা কাটালুম। 臀 নলিনাক্ষ । চললুম ভাই বিনোদ । আমি থাকলে তোমার ভালো লাগে না, তোমাদের গল্প জমে না— চন্দর ছাড়া আর কারো সঙ্গে তোমার প্রাণের কথা হয় না। —“ভালোবাসা ভুলে যাব, মনেরে বুঝাইব, পৃথিবীতে আর যেন কেউ কারেও ভালোবাসে না ।” [ দ্রুতপ্রস্থান বিনোদবিহারী । এই দেখো । রোম্যান্সের কথা হচ্ছিল এই এক রোম্যান্স । و جسدوا