পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চোখের বালি 88ఫి বিনোদিনী শূন্তগুহে অনেকক্ষণ আড়ষ্টের মতো বসিয়া থাকিয়া অবশেষে নিজেকে যেন প্রাণপণ বলে সচেতন করিবার জন্য বক্ষের কাপড় ছিড়িয়া আপনাকে নিষ্ঠুরভাবে আঘাত করিতে লাগিল । খেমি শব্দ শুনিয়া ব্যস্ত হইয়া আসিয়া কহিল, “বউঠাকরুন, করিতেছ কী ।” “তুই যা এখান থেকে” বলিয়া গর্জন করিয়া উঠিয়া বিনোদিনী খেমিকে ঘর হইতে বাহির করিয়া দিল। তাহার পরে সশব্দে দ্বার রুদ্ধ করিয়া, দুই হাত মুঠা করিয়া, মাটিতে লুটাইয়। পড়িয়া, বাণাহত জন্তুর মতো আর্তম্বরে কাদিতে লাগিল। এইরূপে বিনোদিনী নিজেকে বিক্ষত পরিশ্রাস্ত করিয়া মুছিতের মতো মুক্ত বাতায়নের তলে সমস্ত রাত্ৰি পড়িয়া রহিল । 瞳 প্রাতঃকালে স্বর্যালোক গৃহে প্রবেশ করিতেই তাহার হঠাৎ সন্দেহ হইল, বিহারী যদি না গিয়া থাকে, মহেন্দ্র যদি বিনোদিনীকে ভুলাইবার জন্য মিথ্যা বলিয়া থাকে। তৎক্ষণাৎ খেমিকে ডাকিয়া কহিল, ”খেমি, তুই এখনই যা— বিহারী-ঠাকুরপোর বাড়ি গিয়া তাহাদের খবর লইয়া আয় ।” খেমি ঘণ্টাখানেক পরে ফিরিয়া আসিয়া কহিল, “বিহারীবাবুর বাড়ির সমস্ত জানালা-দরজা বন্ধ । দরজায় ঘা দিতে ভিতর হইতে বেহারা বলিল, “বাৰু বাড়িতে নাই, তিনি পশ্চিমে বেড়াইতে গিয়াছেন।” বিনোদিনীর মনে আর সন্দেহের কোনোই কারণ রহিল না। 85 রাত্রেই মহেন্দ্ৰ শয্যা ছাড়িয়া গেছে শুনিয়া রাজলক্ষ্মী বধূর প্রতি অত্যন্ত রাগ করিলেন। মনে করিলেন, আশার লাঞ্ছনাতেই মহেন্দ্র চলিয়া গেছে । রাজলক্ষ্মী আশাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, "মহেন্দ্র কাল রাত্রে চলিয়া গেল কেন ।” আশা মুখ নিচু করিয়া বলিল, “জানি না, মা ।” রাজলক্ষ্মী ভাবিলেন, এটাও অভিমানের কথা। বিরক্ত হইয়া কহিলেন, “তু জান না তো কে জানিবে । তাহাকে কিছু বলিয়াছিলে ?” *. আশা কেবলমাত্র বলিল, “না।” রাজলক্ষ্মী বিশ্বাস করিলেন না। এ কি কখনো সম্ভব হয় । জিজ্ঞাসা করিলেন, “কাল মহিন কখন গেল ।” আশা সংকুচিত হইয়া কহিল, “জানি না।”