পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8SS ." রবীন্দ্র-রচনাবলী হইতে পারে, কিন্তু আমি যদি এ-কাজ করি, তোমাকে সমাজে নষ্ট করি, তবে ইহজীবনে আমি আর মাথা তুলিতে পারিব না। বিহারী । কিন্তু বিনোদিনী, আমি তোমাকে ভালোবাসি । বিনোদিনী । সেই ভালোবাসার অধিকারে আমি আজ একটিমাত্র স্পর্ধ প্রকাশ করিব । বলিয়া বিনোদিনী ভূমিষ্ঠ হইয়া বিহারীর পদাঙ্গুলি চুম্বন করিল। পায়ের কাছে বসিয়া কহিল, “পরজন্মে তোমাকে পাইবার জন্য আমি তপস্ত করিব – এ-জন্মে আমার আর কিছু অাশা নাই, প্রাপ্য নাই । আমি অনেক দুঃখ দিয়াছি, অনেক দুঃখ পাইয়াছি, আমার অনেক শিক্ষা হইয়াছে। সে-শিক্ষা যদি ভুলিতাম, তবে আমি তোমাকে হীন করিয়া আরো হীন হইতাম । কিন্তু তুমি উচ্চ আছ বলিয়াই আজ আমি আবার মাথা তুলিতে পারিয়াছি– এ আশ্রয় আমি ভূমিসাং করিব না ।” বিহার গম্ভীরমুখে চুপ করিয়া রহিল। বিনোদিনী হাতজোড় করিয়া কহিল, “ভুল করিয়ো না— আমাকে বিবাহ করিলে তুমি স্বর্থী হইবে না, তোমার গৌরব যাইবে— আমিও সমস্ত গৌরব হারাইব । তুমি চিরদিন নির্লিপ্ত, প্রসন্ন। আজও তুমি তাই থাকো— আমি দূরে থাকিয়া তোমার কর্ম করি । তুমি প্রসন্ন হও, তুমি স্থখী হও।” (१२ মহেন্দ্র তাহার মাতার ঘরে প্রবেশ করিতে যাইতেছে, তখন আশা তাড়াতাড়ি বাহির হইয়া আসিয়া কহিল, "এখন ও-ঘরে যাইয়ে না ।” মহেন্দ্র জিজ্ঞাসা করিল, “কেন ।” আশা কহিল, “ডাক্তার বলিয়াছেন হঠাৎ মার মনে, সুখের হউক, দুঃখের হউক, একটা কোনো আঘাত লাগিলে বিপদ হইতে পারে।” মহেন্দ্র কহিল, “আমি একবার আস্তে আস্তে র্তাহার মাথার শিয়রের কাছে গিয়া দেখিয়া আসিগে– তিনি টের পাইবেন না ।” আশা কহিল, “তিনি অতি অল্প শবেই চমকিয়া উঠিতেছেন, তুমি ঘরে ঢুকিলেই তিনি টের পাইবেন ।” মহেন্দ্র । তবে, এখন তুমি কী করিতে চাও। আশা। আগে বিহারী-ঠাকুরপো আসিয়া একবার দেখিয়া যান— তিনি স্বেরূপ পরামর্শ দিবেন, তাহাই করিব । বলিতে বলিতে বিহারী আসিয়া পড়িল । আশা তাহাকে ডাকিয়া পাঠাইয়াছিল। বিহারী। বোঠান, ডাকিয়াছ ? মা ভালো আছেন তো? 鲁