পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আত্মশক্তি . 2も〉 সকলেই আপন আপন পল্লীর মাটি আঁকড়াইয়া পড়িয়া থাক, বিদ্যা ও ধনমান অর্জনের জন্য বাহিরে যাইবার জন্য কোনো প্রয়োজন নাই। যে আকর্ষণে বাঙালিজাতটাকে বাহিরে টানিতেছে, তাহার কাছে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করিতেই হইবে— তাহাতে . বাঙালির সমস্ত শক্তিকে উদবোধিত করিয়া তুলিতেছে এবং বাঙালির কর্মক্ষেত্রকে ব্যাপক করিয়া তাহার চিত্তকে বিস্তীর্ণ করিতেছে । কিন্তু এই সময়েই বাঙালিকে নিয়ত স্মরণ করাইয়া দেওয়া দরকার যে, ঘর ও বাহিরের ষে স্বাভাবিক সম্বন্ধ, তাহ যেন একেবারে উলটাপালটা হইয়া না যায়। বাহিরে অর্জন করিতে হইবে, ঘরে সঞ্চয় করিবার জন্যই । বাহিরে শক্তি খাটাইতে হইলেও হৃদয়কে আপনার ঘরে রাখিতে হইবে । শিক্ষা করিব বাহিরে, প্রয়োগ করিব ঘরে। কিন্তু আমরা আজকাল— ঘর কৈম্বু বাহির, বাছির কৈমু ঘর, পর কৈলু আপন, আপন কৈমু পর। এইজন্ত কবিকথিত “স্রোতের সেওলি”র মতো ভাসিয়াই চলিয়াছি । কিন্তু বাঙালির চিত্ত ঘরের মুখ লইয়াছে,– নানা দিক হইতে তাহার প্রমাণ পাওয়া যাইতেছে । কেবল যে স্বদেশের শাস্ত্র আমাদের শ্রদ্ধা আকর্ষণ করিতেছে এবং স্বদেশী ভাষা স্বদেশী সাহিত্যের দ্বারা অলংকৃত হইয়া উঠিতেছে, তাহা নহে,— স্বদেশের শিল্পদ্রব্য আমাদের কাছে আদর পাইতেছে, স্বদেশের ইতিহাস আমাদের গবেষণাবৃত্তিকে জাগ্রত করিতেছে, রাজদ্বারে ভিক্ষাযাত্রার জন্য যে পাথেয় সংগ্ৰহ করিয়াছিলাম, তাহা প্রত্যহুই একটু একটু করিয়া আমাদিগকে গৃহদ্বারে পৌছাইয়া দিবারই সহায়তা করিতেছে । এমন অবস্থায় দেশের কাজ প্রকৃতভাবে আরম্ভ হইয়াছে, বলিতে হইবে । এখন কতকগুলি অদ্ভূত অসংগতি আমাদের চোখে ঠেকিবে এবং তাহা সংশোধন করিয়া লইতে হইবে । প্রোভিনশাল কনফারেন্সই তাহার একটি উৎকট দৃষ্টান্ত । এ কনফারেন্স দেশকে মন্ত্রণা দিবার জন্য সমবেত, অথচ ইহার ভাষা বিদেশী । আমরা ইংরেজি-শিক্ষিতকেই আমাদের নিকটের লোক বলিয়া জানি— আপামর সাধারণকে আমাদের সঙ্গে অস্তরে অস্তরে এক করিতে না পারিলে যে আমরা কেহই নহি, এ-কথা কিছুতেই আমাদের মনে হয় না । সাধারণের সঙ্গে আমরা একটা দুর্তেম্ভ পার্থক্য তৈরি করিয়া তুলিতেছি। বরাবর তাহাদিগকে আমাদের সমস্ত আলাপআলোচনার বাহিরে খাড়া করিয়া রাখিয়াছি । আমরা গোড়াগুড়ি বিলাভের