পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(नीकाफूदि S80 রমেশ আশ্চর্য জানাইয়া কহিল, “বল কী ! বইয়ে লেখা আছে ? কতবড়ো বই ?” এই প্রশ্নে কমলা কিছুকুষ্ঠিত হইয়া কহিল, “বেশি বড়ো বই নয়, কিন্তু ছাপার বই। তাহাতে ছবিও (झ९शा आóछ ।" এতবড়ো প্রমাণের পর রমেশকে হার মানিতে হইল। তার পরে কমলা শিক্ষার বিবরণ শেষ করিয়া বিদ্যালয়ের ছাত্রী ও শিক্ষকদের কথা, সেখানকার দৈনিক কার্যধারা লইয়া বকিয়া যাইতে লাগিল । রমেশ অন্যমনস্ক হইয়া ভাবিতে ভাবিতে মাঝে মাঝে সাড়া দিয়া গেল। কখনাে-বা কথার শেষ সূত্র ধবিয়া এক-আধটা প্রশ্নও করিল। এক সময়ে কমলা বলিয়া উঠিল, “তুমি আমার কথা কিছুই শুনিতেছ না ।" বলিয়া সে রাগ করিয়া তখনই উঠিয়া পড়িল । রমেশ ব্যস্ত হইয়া কহিল, “না না, কমলা, রাগ করিয়ো না- আমি আজ ভালো নাই।” ভালো নাই শুনিয়া তখনই কমলা ফিরিয়া আসিয়া কহিল, “তোমার অসুখ করিয়াছে ? কী রমেশ কহিল, “ঠিক অসুখ নয়- ও কিছুই নয়- আমার মাঝে মাঝে অমন হইয়া থাকেআবার এখনই চলিয়া যাইবে ।” কমলা রমেশকে শিক্ষার সহিত আমোদ দিবার জন্য কহিল, “আমার ভূগোল-প্রবেশে পৃথিবীর যে ছবি আছে, দেখিবে ?" রমেশ আগ্রহ প্ৰকাশ করিয়া দেখিতে চাহিল। কমলা তাড়াতাড়ি তাহার বই আনিয়া রমেশের সম্মুখে খুলিয়া ধরিল | কহিল, “এই-যে দুটাে গোল দেখিতেছি, ইহা আসলে একটা । গোল জিনিসের দুটাে পিঠা কি কখনো একসঙ্গে দেখা যায় ?” রমেশ কিঞ্চিৎ ভাবিবার ভান করিয়া কহিল, “চ্যাপ্টা জিনিসেরও দেখা যায় না ।” কমলা কহিল, “সেইজন্য এই ছবিতে পৃথিবীর দুই পিঠ আলাদা করিয়া আঁকিয়াছে।” এমনি করিয়া সন্ধ্যাটা কাটিয়া গেল । RO অন্নদাবাবু একান্তমনে আশা করিতেছিলেন- যোগেন্দ্ৰ ভালো খবর লইয়া আসিবে, সমস্ত গোলমাল অতি সহজে পরিষ্কার হইয়া যাইবে । যোগেন্দ্র ও অক্ষয় যখন ঘরে আসিয়া প্ৰবেশ করিল, অন্নদাবাবু ভীতভাবে তাঁহাদের মুখের দিকে চাহিলেন । যোগেন্দ্ৰ কহিল, “বাবা, তুমি যে রমেশকে এতদূর পর্যন্ত বাড়াবাড়ি করিতে দিবে, তাহা কে জানিত । এমন জানিলে আমি তোমাদের সঙ্গে তাহার আলাপ করাইয়া দিতাম না ।” অন্নদাবাবু। রমেশের সঙ্গে হেমনলিনীর বিবাহ তোমার অভিপ্রেত, এ কথা তুমি তো আমাকে অনেকবার বলিয়াছ। বাধা দিবার ইচ্ছা যদি তোমার ছিল, তবে আমাকে যোগেন্দ্র । অবশ্য একেবারে বাধা দিবার কথা আমার মনে আসে নাই, কিন্তু তাই বলিয়াঅন্নদাবাবু। ঐ দেখো, ওর মধ্যে তাই বলিয়া' কোথায় থাকিতে পারে ? হয় অগ্রসর হইতে দিবে, নয় বাধা দিবে, এর মাঝখানে আর কী আছে ? যোগেন্দ্র । তাই বলিয়া একেবারে এতটা-দূর অগ্রসরঅক্ষয় হাসিয়া কহিল, “কতকগুলি জিনিস আছে, যা আপনার ঝোকেই অগ্রসর হইয়া পড়ে, তাহাকে আর প্রশ্রয় দিতে হয় না- বাড়িতে বাড়িতে আপনিই বাড়াবাড়িতে গিয়া পীেছায়। কিন্তু যা হইয়া গেছে তা লইয়া তর্ক করিয়া লাভ কী ? এখন, যা করা কর্তব্য তাই আলোচনা করো ।” অন্নদাবাবু ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞাসা করিলেন, “রমেশের সঙ্গে তোমাদের দেখা হইয়াছে ?” যোগেন্দ্র। খুব দেখা হইয়াছে- এত দেখা আশা করি নাই। এমনকি, তার স্ত্রীর সঙ্গেও পরিচয় হইয়া গেল ।