পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S8r ब्रदीक्ष-शष्नायी পরের আর-কোনো স্টেশনে অক্ষয়ের নামিবার কোনো সম্ভাবনা সে কল্পনা করিতে পারিল না। অনেক রাত্রে শ্ৰান্ত হইয়া রমেশ ঘুমাইয়া পড়িল । পরদিন প্রাতে গোয়ালন্দে গাড়ি পৌঁছিলে রমেশ দেখিল, অক্ষয় মাথায় মুখে চাদর জড়াইয়া একটা হাতব্যাগ লইয়া তাড়াতাড়ি স্টীমারের দিকে ছুটিয়া চলিয়াছে। যে স্টীমারে রমেশের উঠিবার কথা সে স্টীমার ছাড়িবার এখনো বিলম্ব আছে। কিন্তু অন্য ঘাট আর-একটা স্টীমার গমনোন্মুখ অবস্থায় ঘন ঘন বঁাশি বাজাইতেছে। রমেশ জিজ্ঞাসা করিল, “এ সীমার কোথায় যাইবে ?” উত্তর পাইল, “পশ্চিমে ।” “কতদূর পর্যন্ত যাইবে ?” “জল না কমিলে কাশী পর্যন্ত যায় ।” শুনিয়া রমেশ তৎক্ষণাৎ সেই স্টীমারে উঠিয়া কমলাকে একটা কামরায় বসাইয়া আসিল এবং তাড়াতাড়ি কিছু দুধ চাল ডাল এবং এক ছড়া কলা কিনিয়া লইল । এ দিকে অক্ষয় অন্য স্টীমারে সকল আরোহীর আগে উঠিয়া মুড়িসুড়ি দিয়া এমন একটা জায়গায় দাড়াইয়া রহিল, যেখান হইতে অন্যান্য যাত্রীদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা যায়। যাত্রীগণের বিশেষ তাড়া ছিল না। জাহাজ ছাড়িবার দেরি আছে- তাহারা এই অবকাশে মুখ হাত ধুইয়া, স্নান করিয়া, কেহ কেহ বা তীরে রাধাবাড়া করিয়া খাইয়া লইতে লাগিল। অক্ষয়ের কাছে গোয়ালন্দ পরিচিত নহে। সে মনে করিল নিকটে কোথাও হােটেল বা কিছু আছে, সেইখানে রমেশ কমলাকে খাওয়াইয়া লাইতেছে । অবশেষে স্টীমারে বাশি দিতে লাগিল । তখনো রমেশের দেখা নাই ; কম্পমান তক্তার উপর দিয়া যাত্রীর দল জাহাজে উঠিতে আরম্ভ করিল। ঘন ঘন বাঁশির ফুৎকারে লোকের তাড়া ক্রমেই বাড়িয়া উঠিতে লাগিল। কিন্তু আগত ও আগন্তুকদের মধ্যে রমেশের কোনো চিহ্ন নাই। যখন আরোহীর সংখ্যা শেষ হইয়া আসিল, তক্তা টানিয়া লইল এবং সারেং নোঙর তুলিবার হুকুম করিল, তখন অক্ষয় ব্যস্ত হইয়া কহিল, “আমি নামিয়া যাইব ।” কিন্তু খালসিরা তাহার কথায় কৰ্ণপাত করিল না। ডাঙা দূরে ছিল না, অক্ষয় স্টীমার হইতে লাফ দিয়া পড়িল । তীরে উঠিয়া রমেশের কোনাে খবর পাওয়া গেল না। অল্পক্ষণ হইল, গােয়ালন্দ হইতে সকালবেলাকার প্যাসেঞ্জার-ট্রেন কলিকাতা-অভিমুখে চলিয়া গেছে। অক্ষয় মনে মনে ভাবিল, কাল রাত্রে গাড়িতে উঠিবার সময়কার টানাটানিতে নিশ্চয় সে রমেশের দৃষ্টিপথে পড়িয়াছে এবং রমেশ তাহার কোনো বিরুদ্ধ অভিসন্ধি অনুমান করিয়া দেশে না গিয়া আবার সকালের গাড়িতেই কলিকাতায় ফিরিয়া গেছে। কলিকাতায় যদি কোনো লোক লুকাইবার চেষ্টা করে, তবে তো তাহাকে বাহির করাই কঠিন হইবে । JJ অক্ষয় সমস্তদিন গোয়ালন্দে ছটফট করিয়া কাটাইয়া সন্ধ্যার ডাকগাড়িতে উঠিয়া পড়িল। পরদিন ভোরে কলিকাতায় পৌঁছিয়া প্রথমেই সে রমেশের দরজিপাড়ার বাসায় আসিয়া দেখিল, তাহার দ্বার বন্ধ ; খবর লইয়া জানিল, সেখানে কেহই আসে নাই। কলুটােলায় আসিয়া দেখিল, রমেশের বাসা শূন্য। অন্নদাবাবুর বাসায় আসিয়া যোগেন্দ্রকে কহিল, “পালাইয়াছে, ধরিতে পারিলাম না ।” যোগেন্দ্ৰ কহিল, “সে কী কথা ?” অক্ষয় তাহার ভ্রমণবৃত্তান্ত বিবৃত করিয়া বলিল ।