পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२१8 রবীন্দ্র-রচনাবলী “আমি তোমাকে খুঁজতেছিলাম।” কমলা চক্রবর্তীর কাপড়ােচাপড় ভঁাজ করিয়া গুছাইতে লাগিল। রমেশ কহিল, “কমলা, এবার আমাদের গাজিপুরে যাওয়া হইল না ; আমি স্থির করিয়াছি, কাশীতে গিয়া প্রাকটিস করিব। তুমি কী ठळ ?” কমলা চক্রবর্তীর বাক্স হইতে চোখ না তুলিয়া কহিল, “না, আমি গাজিপুরেই যাইব । আমি সমস্ত জিনিসপত্র গুছাইয়া লইয়াছি।” । কুলার ঐ ধাইল উত্তর লেন্সি আশ্চর্যায় হলে কহিল,"তুমিক একাই শুইরেল কমলা চক্রবর্তীর মুখের দিকে তাহার স্নিগ্ধ চক্ষু তুলিয়া কহিল, “কেন, সেখানে তো খুড়োমশায় আছেন।” কমলার এই কথায় চক্রবর্তী কুষ্ঠিত হইয়া পড়িলেন ; কহিলেন, “মা, তুমি যদি সন্তানের প্রতি এতদূর পক্ষপাত দেখাও, তাহা হইলে রমেশবাবু আমাকে দু চক্ষে দেখিতে পরিবেন না।” এ সম্বন্ধে যে কাহারও কোনো সম্মতির অপেক্ষা আছে, কমলার কণ্ঠস্বরে এরূপ প্ৰকাশ পাইল না। ঝড়জলের পর সেদিন রাত্রে জ্যোৎস্না পরিষ্কার হইয়া ফুটিয়াছে। রমেশ ডেকের কেদারায় বসিয়া ভাবিতে লাগিল, “এমন করিয়া আর চলিবে না। ক্রমেই বিদ্রোহী কমলাকে লইয়া জীবনের সমস্যা অত্যন্ত দুরূহ হইয়া উঠিবে। এমন করিয়া কাছে থাকিয়া দূরত্ব রক্ষা করা দুরূহ। এবারে হাল ছাড়িয়া দিব । কমলাই আমার স্ত্রী- আমি তো উহাকে স্ত্রী বলিয়াই গ্ৰহণ করিয়াছিলাম। মন্ত্র পড়া হয় নাই বলিয়াই কোনাে সংকোচ করা অন্যায়। যমরাজ সেদিন কমলাকে বধুরূপে আমার পার্থে আনিয়া দিয়া সেই নির্জন সৈকতদ্বীপে স্বয়ং গ্রন্থিবন্ধন করিয়া দিয়াছেন— তাহার মতো এমন পুরোহিত জগতে কোথায় আছে!’ * হেমনলিনী এবং রমেশের মাঝখানে একটা যুদ্ধক্ষেত্ৰ পড়িয়া আছে। বাধা-অপমান-অবিশ্বাস কাটিয়া যদি রমেশ জয়ী হইতে পারে তবেই সে মাথা তুলিয়া হেমনলিনীর পার্থে গিয়া দাড়াইতে পরিবে। সেই যুদ্ধের কথা মনে হইলে তাহার ভয় হয় ; জিতিবার কোনো আশা থাকে না। কেমন করিয়া প্ৰমাণ করিবে ? এবং প্রমাণ করিতে হইলে সমস্ত ব্যাপারটা লোকসাধারণের কাছে এমন কদৰ্য শুরু কেলর পক্ষে এল সাংঘািতক আখতার হয় উঠবে যে, সে সবের মান স্থান দেওয়া অতএব দুর্বলের মতো আর দ্বিধা না করিয়া কমলাকে স্ত্রী বলিয়া গ্ৰহণ করিলেই সকল দিকে শ্রেয় হইবে। হেমনলিনী তে রমেশকে ঘূণা করিতেছে- এই ঘূণাই তাঁহাকে উপযুক্ত সৎপাত্রে চিত্তসমর্পণ করিতে আনুকূল্য করবে। এই ভাবিয়া রমেশ একটা দীর্ঘনিশ্বাসের দ্বারা সেইদিককার আশাটাকে जूभिज९ कब्रिशा निल। WS রমেশ জিজ্ঞাসা করিল, “কী রে, তুই কোথায় চলিযাছিস ?” উমেশ কহিল, “আমি মােঠাকরুনের সঙ্গে যাইতেছি।” রমেশ । আমি যে তোর কাশী পর্যন্ত টিকিট করিয়া দিয়াছি। এ-যে গাজিপুরের ঘাট। আমরা তো কাশী যাইব না । , উমেশ । আমিও যাইব না । উমেশ যে তাহাদের চিরস্থায়ী বন্দােবস্তের মধ্যে পড়বে এরূপ আশঙ্কা রমেশের মনে ছিল না ; কিন্তু ছোড়াটার অবিচলিত দৃঢ়তা দেখিয়া রমেশ স্তম্ভিত হইল। কমলাকে জিজ্ঞাসা করিল, “কমলা,