পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ᏊᏔᏯO রবীন্দ্র-রচনাবলী করিলেন। বিনয়ও কলিকাতার লোক, হরিমোহিনী শুনিয়াছেন লেখাপড়াতেও সে বড়ো কম নয়অথচ এই বিনয় তাহাকে কিছুমাত্র অশ্রদ্ধা করে না, তাহাকে আপনি লোকের মতো দেখে, ইহাতে র্তাহার আত্মসম্মান একটা নির্ভর পাইল । বিশেষ করিয়া এইজন্যই অল্প পরিচয়েই বিনয় তাহার নিকট আত্নীয়ের স্থান লাভ করিল। তঁহার মনে হইতে লাগিল, বিনয় তাহার বর্মের মতো হইয়া অনা লোকের ঔদ্ধত্য হইতে র্তাহাকে রক্ষা করিবে। এ বাড়িতে তিনি অত্যন্ত বেশি প্রকাশ্য হইয়া পড়িয়াছিলেন— বিনয় যেন তাহার আবরণের মতো হইয়া তীহাকে আড়াল করিয়া রাখিবে। হরিমোহিনীর কাছে বিনয় যাওয়ার অল্পীক্ষণ পরেই ললিতা সেখানে কখনোই সহজে যাইত নাকিন্তু আজ হারানবাবুর গুপ্ত বিদ্যুপের আঘাতে সে সমস্ত সংকোচ ছিন্ন করিয়া যেন জোর করিয়া উপরের ঘরে গেল। শুধু গেল তাঁহা নহে, গিয়াই বিনয়ের সঙ্গে অজস্র কথাবার্তা আরম্ভ করিয়া দিল । তাহাদের সভা খুব জমিয়া উঠিল ; এমনকি, মাঝে মাঝে তাহাদের হাসির শব্দ নীচের ঘরে একাকী আসীন হারানবাবুর কানের ভিতর দিয়া মরমে পশিয়া বিদ্ধ করিতে লাগিল। তিনি বেশিক্ষণ একলা থাকিতে পারিলেন না, বরদাসুন্দরীর সঙ্গে আলাপ করিয়া মনের আক্ষেপ নিবৃত্ত করিতে চেষ্টা করিলেন। বরদাসুন্দরী শুনিলেন যে, সুচরিতা হারানবাবুর সঙ্গে বিবাহে অসম্মতি জ্ঞাপন করিয়াছে। শুনিয়া তাহার পক্ষে ধৈর্য রক্ষা করা একেবারে অসম্ভব হইল। তিনি কহিলেন, “পানুবাবু, আপনি ভালেমানষি করলে চলবে না। ও যখন বারবার সম্মতি প্রকাশ করেছে এবং ব্ৰাহ্মসমাজ-সূদ্ধ সকলেই যখন এই বিয়ের জন্য অপেক্ষা করে আছে তখন ও আজ মাথা নাড়ল বলেই যে সমস্ত উলটে যাবে এ কখনোই হতে দেওয়া চলবে না। আপনার দাবি আপনি কিছুতেই ছাড়বেন না বলে রাখছি, দেখি ও কী করতে পারে ।” এ সম্বন্ধে হারানবাবুকে উৎসাহ দেওয়া বাহুল্য— তিনি তখন কাঠের মতন শক্ত হইয়া বসিয়া মাথা তুলিয়া মনে মনে বলিতেছিলেন– “অন প্রিন্সিপাল এ দাবি ছাড়া চলিবে না— আমার পক্ষে সুচরিতাকে ত্যাগ করা বেশি কথা নয়, কিন্তু ব্ৰাহ্মসমাজের মাথা হেঁট করিয়া দিতে পারিব না।" বসিয়াছিল। হরিমোহিনী তৎক্ষণাৎ ব্যস্ত হইয়া একটি ছােটাে থালায় কিছু ভিজানো ছােলা, ছানা, মাখন, একটু চিনি, একটি কলা, এবং কাসার বাটিতে কিছু দুধ আনিয়া সযত্নে বিনয়ের সম্মুখে ধরিয়া দিয়াছেন। বিনয় হাসিয়া কহিল, “অসময়ে ক্ষুধা জানাইয়া মাসিকে বিপদে ফেলিব মনে করিয়াছিলাম, কিন্তু আমি ঠকিলাম”- এই বলিয়া খুব আড়ম্বর করিয়া বিনয় আহারে বসিয়াছে এমন সময় বরদাসুন্দরী আসিয়া উপস্থিত হইলেন । বিনয় তাহার থালার উপরে যথাসম্ভব নত হইয়া নমস্কারের চেষ্টা করিয়া কহিল, “অনেকক্ষণ নীচে ছিলুম ; আপনার সঙ্গে দৈখা হল না।” বরদাসুন্দরী তাহার কোনো উত্তর না করিয়া সুচরিতার প্রতি লক্ষ করিয়া কহিলেন, “এই-যে ইনি এখানে ! আমি যা ঠাউরেছিলুম তাই। সভা বসেছে। আমোদ করছেন। এ দিকে বেচার হারানবাবু সক্কাল থেকে ওঁর জন্যে অপেক্ষা করে বসে রয়েছেন, যেন তিনি ওঁর বাগানের মালী । ছেলেবেলা থেকে ওদের মানুষ করলুম— কই বাপু, এত দিন তো ওদের এরকম ব্যবহার কখনো দেখি নি। কে জানে আজকাল এ-সব শিক্ষা কোথা থেকে পাচ্ছে। আমাদের পরিবারে যা কখনো ঘটতে পারত না আজকাল তাই আরম্ভ হয়েছে— সমাজের লোকের কাছে যে আমাদের মুখ দেখাবার জো রইল না। এত দিন ধরে । এত করে যা শেখানো গেল সে সমস্তই দু দিনে বিসর্জন দিলে। এ কী সব কাণ্ড ।” छन्। दङ्ग अन्त छ "द डा। र श० ,ि * श९) आिदै अश्वर श्व অপরাধ যে হরিমোহিনীর লেশমাত্র নহে। ইহাই বলিবার জন্য ললিতা মুহুর্তের মধ্যে উদ্যত হইয় উঠিয়ছিল। সুচরিতা গোপনে সবলে তাহার হাত চাপিয়া ধরিয়া তাহাকে নিরস্ত করিল এবং কোনো প্রতিবাদমাত্র না করিয়া নীচে চলিয়া গেল।