পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

రితిని রবীন্দ্র-রচনাবলী পার, কিন্তু এই ভয়ট ভূতে পাওয়ার মতো আমাকে পেয়েছে। শুধু আমার জন্তে নয়, তোমার জন্তে আমার আরও ভয় হয়, আমি জানি তোমার দিকে ওর ঈর্ষ সাপের ফণার মতো ফোস ফোস করছে।” “এল, ওর মতো জন্তুদের সাহস নেই, আছে দুর্গন্ধ, তাই কেউ ওদের ঘাটাতে চায়, না । কিন্তু আমাকে ও সর্বাস্তঃকরণে ভয় করে, আমি ভয়ংকর বলে যে তা নয়, আমি ওর থেকে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্রজাতীয় বলে।” “দেখো অস্তু, জীবনে অনেক দুঃখবিপদের সম্ভাবনা আমি ভেবেছি, তার জন্তে প্রস্তুতও আছি কিন্তু একদিন কোনো দুর্বোগে যেন ওর কবলে না পড়ি, তার চেয়ে মৃত্যু ভালো ।” অন্তর হাত চেপে ধরলে, যেন এখনই উদ্ধার করবার সময় হয়েছে । “জানো অস্তু, হিংস্ৰ জন্তুর হাতে অপমৃত্যুর কল্পনা কখনো কখনো মনে আসে, তখন দেবতাকে জানাই, বাঘে খায় ভালুকে পায় সেও ভালো, কিন্তু আমাকে পাকের মধ্যে টেনে নিয়ে কুমিরে খাবে—এ যেন কিছুতে না ঘটে।” “আমি কি বাঘভালুকের কোঠায় না কি ?” “ন গো, তুমি আমার নরসিংহ, তোমার হাতে মরণেই আমার মুক্তি। ওই শোনো পায়ের শব্দ। উপরে উঠে এল বলে ।” অতীন্দ্র ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়ে জোর গলায় বললে, “বট, এখানে নয়, চলো নিচে বসবার ঘরে ।” বটু বললে, “এলাদি—” “এলাদি এখন কাপড় ছাড়তে গেলেন, চলো নিচে ।” “কাপড় ছাড়তে ? এত দেরিতে ? সাড়ে আটটা—” “হুঁ হুঁ, আমিই দেরি করিয়ে দিয়েছি।” “কেবল একটা কথা । পাচ মিনিট ।” “তিনি মানের ঘরে গেছেন। বলে গেছেন, এ ঘরে কেউ আসে তার ইচ্ছে নয়।” “আপনি ?” “আমি ছাড়া ।” বটু খুব স্পষ্ট একটা ঠোটবাক হাসি হাসলে। বললে, “আমরা চিরকাল রইলুম ব্যাকরণের সাধারণ নিয়মে, আর আপনি দুদিন এসেই উঠে পড়েছেন, আর্বপ্রয়োগে । একৃসেপশন পিছল পথের আশ্রয়, বেশিকাল সয় না বলে রেখে দিলুম।” বলে তর তর করে নেমে চলে গেল ।