পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

లిesు রবীন্দ্র-রচনাবলী করতে পারে তাহলে দম আটকে মরে। আমি ভাবুক নই, বোকাও নই, ভাই ডায়ারি রাখি নি, যদি রাখতুম তোমার হাতে দিতে পারলে মন খোলসা,হত।” “মাস্টারমশায়—” “মাস্টারমশায়ের কাছে খবর দেওয়া চলে কিন্তু মন খোলা চলে না। ইন্দ্রনাথের, প্রধান মন্ত্ৰী আমি, কিন্তু তার সব কথা আমি যে জানি তা মনেও ক'রো না। এমন কথা আছে যা আন্দাজ করতেও সাহস হয় না। আমার বিশ্বাস, আমাদের দলের যার আপনি ঝরে পড়ে, ইন্দ্রনাথ আমার মতোই তাদের বেটিয়ে ফেলে পুলিসের পাশতলায়। কাজটা গৰ্হিত কিন্তু নিষ্পাপ। বলে রাখছি, একদিন ওরই বা আমারই সাহায্যে তোমার হাতে শেষ হাতকড়ি পড়বে, তখন কিছু মনে ক’রো না যেন । তোমার এ-বাড়িতে আসার খবর বটুই প্রথম থানার কানাকানি-বিভাগে জানিয়েছে। কাজেই আমাকে টেক্কা দিতে হল, ফোটোগ্রাফ তুলে ওদের কাছে দিয়েছি। এখন কাজের কথা বলি। চব্বিশ ঘণ্টা তোমাকে সময় দিচ্ছি, তার পরেও যদি এখানে থাক তাহলে আমিই তোমাকে থানার পথে এগিয়ে দেব । এখান থেকে কোথায় যেতে হবে সবিস্তারে তার রাস্তাঘাট এই লিখে দিয়েছি—এর অক্ষর তোমার জানা আছে, তবু মুখস্থ করেই ছিড়ে ফেলো । এই দেখো ম্যাপ | রাস্তার এপাশে তোমার বাসা, ইস্কুলবাড়ির কোণের ঘরে। ঠিক সামনে পুলিসের থান। সেখানে আছে আমার কোনো এক সম্পর্কে নাতি, রাইটর কনস্টেবল, তাকে রাঘব বোয়াল বলি। তিনপুরুষে পশ্চিমে বাস। বাংলা পড়াবার মাস্টারি পেয়েছ তুমি। সেখানে গেলেই রাঘব তোমার তোরঙ্গ ঘটবে, পকেট ঝাড়া দেবে, গুতোগাতাও দিতে পারে। সেইটেকেই ভগবানের দয়া বলে মনে ক’রে । বাঙালি মাত্রই যে তালকসম্প্রদায়ভুক্ত এই তত্ত্বটি রঘুবীরের হিন্দিভাষায় সর্বদাই প্রকাশ পেয়ে থাকে। তুমি তার কোনোপ্রকার রূঢ় প্রতিবাদের চেষ্টামাত্র করে না, প্রাণ থাকতে এদেশে ফিরে এসো না । বাইসিক্লট রইল বাইরে । ইশারা যখনই পাবে সেই মুহূর্তে চড়ে বসে। এস বাবাজি, শেষ দিনের মতো কোলাকুলি করে নিই।” কোলাকুলি হয়ে গেলে চলে গেল কানাই । অতীন চুপ করে বসে রইল। তাকিয়ে দেখতে লাগল অস্তরের দিকে। অকালে এসে পড়ল তার জীবনের শেষ অঙ্ক, যবনিকা আসন্নপতনমুখী, দীপ নিবে এসেছে। যাত্রা আরম্ভ হয়েছিল নির্মল ভোরের আলোয় ; সেখান থেকে আজ অনেক দূরে এসে পড়েছে। পথে পা বাড়াবার সময় যে পাথেয় হাতে ছিল তার কিছুই বাকি নেই; পথের শেষভাগে নিজেকে কেবলই ঠকিয়ে খেয়েছে ; একদিন হঠাৎ পথের একটা বাকের মুখে সৌন্দর্বের ষে আশ্চর্য দান নিয়ে ভাগ্যলক্ষ্মী তার সামনে দাড়িয়েছিল সে যেন