পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ধর্ম ల(లి বর্মের সরল আদর্শ . আমার গৃহকোণের জন্য যদি একটি প্রদীপ আমাকে জালিতে হয়,তবে তাহার জন্ত আমাকে কত আয়োজন করিতে হয়—সেটুকুর জন্য কতলোকের উপর আমার নির্ভর । কোথায় সর্বপ-বপন হইতেছে, কোথায় তৈল-নিষ্কাশন চলিতেছে, কোথায় তাহার ক্রয়বিক্রয়—তাহার পরে দীপসজ্জারই বা কত উযোগ - এত জটিলতায় যে আলোকটুকু পাওয়া যায় তাহ কত অল্প। তাহাতে আমার ঘরের কাজ চলিয়া যায়, কিন্তু বাহিরের অন্ধকারকে দ্বিগুণ ঘনীভূত করিয়া তোলে। து. বিশ্বপ্রকাশক প্রভাতের আলোককে গ্রহণ করিবার জন্য কাহারও উপরে আমাকে নির্ভর করিতে হয় না,—তাহা আমাকে রচনা করিতে হয় না, কেবলমাত্র জাগরণ করিতে হয় । চক্ষু মেলিয়া ঘরের দ্বার মুক্ত করিলেই সে আলোককে আর কেহ ঠেকাইয়া রাখিতে পারে না । যদি কেহ বলে প্রভাতের আলোককে দর্শন করিবার জন্য একটি অত্যন্ত নিগৃঢ় । কৌশল কোথাও গুপ্ত আছে, তবে তৎক্ষণাং এই কথা মনে হয়, নিশ্চয় তাহ প্রভাতের আলোক নহে—নিশ্চয় তাহা কোনো কৃত্রিম আলোক—সংসারের কোনো বিশেষব্যবহারযোগ্য কোনো ক্ষুদ্র আলোক। কারণ, বৃহৎ আলোক আমাদের মস্তকের উপরে আপনি বর্ষিত হইয়া থাকে—স্কুদ্র আলোকের জন্তই অনেক কলকারখানা প্রস্তুত করিতে হয় । 醇 যেমন এই আলোক, তেমনি ধর্ম। তাহাও এইরূপ অজস্ৰ, তাহ এইরূপ সরল। তাহা ঈশ্বরের আপনাকে দান,—তাহ নিত্য, তাহ ভূম, তাহ আমাদিগকে বেষ্টন করিয়া আমাদের অন্তরবাহিরকে ওতপ্রোত করিয়া স্তন্ধ হইয়া রহিয়াছে । তাহাকে পাইবার জন্য কেবল চাহিলেই হইল, কেবল হৃদয়কে উন্নীলিত করিলেই হইল । আকাশপুর্ণ দিবালোককে উদযোগ করিয়া পাইতে হইলে যেমন আমাদের পক্ষে পাওয়া অসম্ভব হুইত, তেমনি আমাদের অনন্তজীবনের সম্বল ধর্মকে বিশেষ আয়োজনের দ্বারা পাইতে হইলে সে পাওয়া কোনোকালে ঘটিয়া উঠিত না। আমরা নিজে যাহা রচনা করিতে যাই, তাহ জটিল হইয় পড়ে। আমাদের সমাজ । জটিল, আমাদের সংসার জটিল, আমাদের জীবনযাত্রা জটিল। এই জটিলতা জাপন বহুধাবিভক্ত বৈচিত্র্যের দ্বারা অনেক সময় বিপুলতা ও প্রবলতার ভান করিয়া আমাদের মৃঢ়চিত্তকে অভিভূত করিয়া দেয়। যে দার্শনিক গ্রন্থের লেখা অত্যন্ত ঘোরালো, . আমাদের অজ্ঞবুদ্ধি তাহার মধ্যেই বিশেষ পাণ্ডিত্য আরোপ করিয়া বিস্ময় অনুভব করে।