পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শান্তিনিকেতন * 8(?? জষ্ঠ আবৃত করে। “আমির” দ্বারাই এই গৃহ এই সংসার ঠাসা রয়েছে- কত দলিল, কত দস্তাবেজ, কত বিলিব্যবস্থা, কত বাদবিসংবাদ । কিন্তু ঈশ্বর কোথায় । কেবল । মুখের কথায় । আর কোথাও যে তিলধারণের স্থান নেই। এই মুখের কথায় ঈশ্বরকে স্বীকার করার মতো নিজেকে ফাকি দেবার আর কি কিছু আছে। আমি এই সম্প্রদায়ভুক্ত, আমাদের এই মত, আমি এই কথা বলি— ঈশ্বরকে এইটুকুমাত্র ফকির জায়গা ছেড়ে দিয়ে তার পরে বাকি সমস্ত জায়গাট অসংকোচে নিজে জুড়ে বসবার যে স্পর্ধা, সেই স্পর্ঘ্য আপনাকে আপনি জানে না বলেই এত ভয়ানক। এই স্পর্ধ সংশয়ের সমস্ত বেদনাকে নিঃসাড় করে রাখে । আমরা ষে জানি নে এটাও জানতে দেয় না । সংশয়ের বেদন তখনই জেগে ওঠে যখন গোপনভাবে ঈশ্বর আমাদের চৈতন্তের একটা দিকে স্পর্শ করেন। তখন সংসারের মধ্যে থেকেও সংসার আমাদের কান্না থামাতে পারে না । এবং তার দিকে দুই বাহু প্রসারিত করেও অন্ধকারে তার নাগাল পাই নে। তখন এইটে জানা আরম্ভ হয় যে, যা পেয়েছি তাতে কোনোমতেই আমার চলবে না এবং যা না হলে আমার চলা অসম্ভব তা আমি কিছুতেই পাচ্ছি নে । এমন অসহ কষ্টের অবস্থা আর কিছুই নেই। যখন প্রসবের সময় আসন্ন তখন গর্তের শিশুকে একদিকে নাড়ি সম্পূর্ণ ছাড়ছে না অন্যদিকে ভূমিষ্ঠ হবার বেগ তাকে আকর্ষণ করছে। মুক্তির সঙ্গে বন্ধনের টানাটানির তখনও কোনো মীমাংসা হয় নি। এই সময়ের বেদনাই জন্মদানের পূর্বস্বচন, এই বেদনার অভাবকেই চিকিৎসক ভয় করেন। }. যথার্থ সংশয়ের বেদনাও আত্মাকে সত্যের মধ্যে মুক্তিদানের বেদন । সংসার একদিকে তাকে আপনার মধ্যে আবৃত আচ্ছন্ন করে রেখেছে বিমুক্ত সত্য অন্যদিকে তার অলক্ষ্যে তাকে আহবান করছে—সে অন্ধকারের মধ্যেই আছে অথচ আলোককে না জেনেই সে আলোকের আকর্ষণ অস্তুভব করছে। সে মনে করছে বুঝি তার এই ব্যাকুলতার কোনো পরিণাম নেই, কেননা সে তো সম্মুখে পরিণামকে দেখতে পাচ্ছে না, লে গুর্ভস্থ শিশুর মতো নিজের আবরণকেই চার দিকে অনুভব করছে। আমুক সেই অসহ বেদনা—সমস্ত প্রকৃতি কঁাতে থাক—সে কাল্লার অবসান হবে। কিন্তু ষে-কান্না বেদনায় জেগে ওঠে নি, ফুটে ওঠে নি, জড়তার শত বেষ্টনের মধ্যে প্রচ্ছন্ন হয়ে আছে—তার যে কোনো পরিণাম নেই। সে যে রক্তেমাংসে অস্থিমজ্জায় জড়িয়ে রয়েই গেল—তার ভাৱ ৰে চব্বিশৰষ্ট নাড়িতে নাড়িতে বহন করে বেড়াতে হবে। ষেদিন সংশয়ের ক্ৰন্দন আমাদের মধ্যে সত্য হয়ে ওঠে, সেদিন আমরা সম্প্রদায়ের