পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ማ8 রবীন্দ্র-রচনাবলী বেশেই আসুক তার মুখের দিকে চেয়ে যেন বলতে পারি তোমাকে চিনেছি, বন্ধু তোমাকে চিনেছি। ৩০ অগ্রহায়ণ ১৩১৫ প্রার্থনা উপনিষৎ ভারতবর্ষের ব্ৰহ্মজ্ঞানের বনস্পতি । এ যে কেবল সুন্দর শুশমল ছায়াময় তা নয়, এ বৃহৎ এবং এ কঠিন। এর মধ্যে যে কেবল সিদ্ধির প্রাচুর্ধ পল্লবিত তা নয় এতে তপস্তার কঠোরতা উর্ধ্বগামী হয়ে রয়েছে। সেই অভ্ৰভেদী সুদৃঢ় অটলতার মধ্যে একটি মধুর ফুল ফুটে আছে —তার গন্ধে আমাদের ব্যাকুল করে তুলেছে। সেটি ওই মৈত্রেয়ীর প্রার্থনা-মন্ত্রটি । كيو যাজ্ঞবল্ক্য যখন গৃহত্যাগ করবার সময় তার পত্নী দুটিকে র্তার সমস্ত সম্পত্তি দান করে যেতে উদ্যত হলেন তখন মৈত্রেয়ী জিজ্ঞাসা করলেন, আচ্ছ বলে তো এ-সব নিয়ে কি আমি অমর হব ? যাজ্ঞবল্ক্য বললেন, না, তা হবে না, তবে কি না উপকরণবস্তের যেমনতরো জীবন তোমার জীবন সেই রকম হবে । সংসারীরা যেমন করে তাদের ঘরদুয়ার গোরুবাছুর অশনবসন নিয়ে স্বচ্ছন্দে দিন কাটায় তোমরাও তেমনি করে দিন কাটাতে পারবে । মৈত্রেয়ী তখন একমুহূর্তে বলে উঠলেন “যেনাহং নামৃত স্যাম কিমহং তেন কুবাম্।” য়ার দ্বারা আমি অমৃত না হব তা নিয়ে আমি কী করব । এ তো কঠোর জ্ঞানের কথা নয়—তিনি তো চিন্তার দ্বারা ধ্যানের দ্বারা কোনটা নিত্য কোনটা অনিত্য তার বিবেকলাভ করে এ-কথা বলেন নি–র্তার মনের মধ্যে একটি কষ্টিপাথর ছিল যার উপরে সংসারের সমস্ত উপকরণকে একবার ঘষে নিয়েই তিনি বলে উঠলেন “আমি যা চাই এ তে তা নয়।” উপনিষদে সমস্ত পুরুষ ঋষিদের জ্ঞানগম্ভীর বাণীর মধ্যে একটিমাত্র স্ত্রীকণ্ঠের এই একটিমাত্র ব্যাকুল বাক্য ধ্বনিত হয়ে উঠেছে এবং সে ধ্বনি বিলীন হয়ে যায় নিসেই ধ্বনি তাদের মেঘমন্ত্র শাস্ত স্বরের মাঝখানে অপূর্ব একটি অশ্রপুর্ণ মাধুর্য জাগ্রত করে রেখেছে। মানুষের মধ্যে যে পুরুষ আছে উপনিষদে নানাদিকে নানাভাবে আমরা তারই সাক্ষাৎ পেয়েছিলুম এমন সময়ে হঠাৎ এক প্রান্তে দেখা গেল মানুষের মধ্যে যে নারী রয়েছেন তিনিও সৌন্দর্য বিকীর্ণ করে দাড়িয়ে রয়েছেন ।