পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শাস্তিনিকেতন ৫২৩ অতএব জগতে ঈশ্বরের এই যে অপরূপ রহস্যময় সৌন্দর্ষের আয়োজন এ আমাদের কাছে কোনো মামুল কোনো খাজনা আদায় করে না, এ আমাদের স্বাধীন ইচ্ছাকে চায়—বলে আমাতে তোমার আনন্দ হ’ক ; তুমি স্বত আমাকে গ্রহণ করে । তাই আমি বলছিলুম, আমাদের অন্তরাত্মার আমি-ক্ষেত্রের একটা স্বইছাড়া নিকেতনে সেই আনন্দময়ের যে যাতায়াত আছে জগৎ জুড়ে তার নিদর্শন পড়ে রয়েছে। আকাশের নীলিমায়, বনের শুামলতায়, ফুলের গন্ধে সর্বত্রই তার সেই পায়ের চিহ্ন ধর পড়েছে যে । সেখানে যদি তিনি রাজবেশ ধরে আসতেন তাহলে জোড়হাত করে তাকে মানভূম -কিন্তু তিনি যে বন্ধুর বেশে ধীরপদে আসেন, একেবারে একলা আসেন, সঙ্গে তার পদাতিকগুলো শাসনদ ও হাতে জয়ভস্ক বাজিয়ে কেউ আসে না—সেইজন্তে পাপ ঘুম ভাঙতেই চায় না, দরজা বন্ধই থাকে। কিন্তু এমন করলে তো চলবে না-শাসনের দায় নেই বলেই লক্ষ্মীছাড়া যদি প্রেমের দায় স্বেচ্ছার সঙ্গে স্বীকার না করে তবে জন্মজন্ম সে কেবল দাস, দালাহুদাস হয়েই ঘুরে মরবে। মানবজন্ম যে আনন্দের জন্ম সে খবরটা সে ষে একেবারে পাবেই না । ওরে, অস্তরের ষে নিভৃততম আবাসে চন্দ্রস্থধের দৃষ্টি পৌছোয় না, যেখানে কোনো অন্তরঙ্গ মাছুষেরও প্রবেশপথ নেই, যেখানে কেবল একলা তারই আসনপাত সেইখানকার দরজাট খুলে দে, আলো জেলে তোল। যেমন প্রভাতে মুম্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি তার আলোক আমাকে সর্বাঙ্গে পরিবেষ্টন করে আছে যেন ঠিক তেমনি প্রত্যক্ষ বুঝতে পারি তার আনন্দ, তার ইচ্ছা, তার প্রেম আমার জীবনকে সর্বত্র নীরন্ধ নিবিড়ভাবে পরিবৃত করে আছে। তিনিও পণ করে বসে আছেন তার এই আনন্দমুর্তি তিনি আমাদের জোর করে দেখাবেন না—বরঞ্চ তিনি প্রতিদিনই ফিরে ফিরে যাবেন, বরঞ্চ তার এই জগৎজোড়া সৌন্দর্ষের আয়োজন প্রতিদিন আমার কাছে ব্যর্থ হবে তবু তিনি এতটুকু জোর করবেন না । যেদিন আমার প্রেম জাগবে সেদিন তার প্রেম, আর লেশমাত্র গোপন থাকবে না । কেন যে আমি “আমি” হয়ে এতদিন এত দুঃখে দ্বারে দ্বারে ঘুরে মরেছি সেদিন সেই বিরহদুঃখের রহস্ত একমুহূর্তেই ফাস হয়ে যাবে । ১ম পৌষ