পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শান্তিনিকেতন జ সত্যকে জানি নি এবং সর্ত্যের সঙ্গে সত্যরক্ষা করে চলি নি সেখানে আমাদের অস্তরে বাহিরে অশান্তি এবং সেই অশাস্তিই অমঙ্গল—নিয়মের সঙ্গে নিয়মের বিচ্ছেদই অশিৰ । ধিনি শিবমূর্তার মধ্যেই অদ্বৈতম্ প্রকাশমান । সত্য যেখানে শিবস্বরূপ, সেইখানেই তিনি আনন্দময় প্রেমময়, সেইখানেই তার সকলের সঙ্গে মিলন। মঙ্গলের মধ্যে ছাড়া মিলন নেই—অমঙ্গলই হচ্ছে বিরোধ বিচ্ছেদের অপদেবতা । * একদিকে সত্য অস্তদিকে আনন্দ, মাঝখানে মঙ্গল । তাই এই মঙ্গলের মধ্যে দিয়েই আমাদের আনন্দলোকে যেতে হয় । আমাদের দেশে ষে তিন আশ্রম ছিল—ব্রহ্মচর্ষ, গার্হস্থ্য ও বানপ্রস্থ, তা ঈশ্বরের এই তিন স্বরূপের উপর প্রতিষ্ঠিত। শাস্তস্বরূপ, শিবস্বরূপ, অদ্বৈতস্বরূপ। ব্ৰহ্মচর্ষের দ্বারা জীবনে শাস্তস্বরূপকে লাভ করলে তবে গৃহধর্মের মধ্যে শিবস্বরূপকে , উপলব্ধি করা সম্ভবপর হয়—নতুবা গার্হস্থ্য অকল্যাণের আকর হয়ে ওঠে। সংসারে সেই মঙ্গলের প্রতিষ্ঠা করতে হলেই স্বাৰ্ধবৃত্তিসকল সম্পূর্ণ পরাহত হয় এবং যথার্থ মিলনের ধর্ম যে কিরূপ নির্মল আত্মবিসর্জনের উপরে স্থাপিত তা আমরা বুঝতে পারি। যখন তা সম্পূর্ণ বুঝি তখনই খিনি অদ্বৈতম্ সেই ঐক্যরূপী পরমাত্মার সঙ্গে সর্বপ্রকার বাধাহীন প্রেমের মিলন সম্ভবপর হয় । আরম্ভে সত্যের পরিচয়, মধ্যে মঙ্গলের পরিচয়, পরিণামে আনন্দের পরিচয় । প্রথমে জ্ঞান, পরে কর্ম, পরে প্রেম । এইজন্তে যেমন আমাদের ধ্যানের মন্ত্র শাস্তম্ শিবম্ অদ্বৈতমূ—তেমনি আমাদের প্রার্থনার মন্ত্র “আসতে মা সদগময়, তমসে মা জ্যোতিৰ্গময়, মৃত্যোৰ্মামৃতং গময় ।” অসত্য হতে সত্যে, পাপ হতে পুণ্যে এবং আসক্তি হতে প্রেমে নিয়ে যাও। তবেই হে প্রকাশ, তুমি আমার প্রকাশ হবে, তবেই হে রুক্স, আমার জীবনে তুমি প্রসন্ন হয়ে উঠবে। সত্যে শেষ নয়, মঙ্গলে শেষ নয়, অদ্বৈতেই শেষ । জগৎপ্রকৃতিতে শেষ নয়, সমাজপ্রকৃতিতেও শেষ নয়, পরমাত্মাতেই শেষ, এই হচ্ছে আমাদের ভারতবর্ষের বাণী—এই বাণীটিকে জীবনে যেন সার্থক করতে পারি এই আমাদের প্রার্থনা হ’ক । ২১ পৌষ swరి=tు